২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস যখন ম্যাকওয়ার্ল্ড ইভেন্টে প্রথমবারের মতো আইফোন উন্মোচন করেন তখনও কেউ ভাবতে পারেনি বিশ্বজুড়ে এই ফোন কেমন পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে।
আইফোন উন্মোচনের সময় ব্যবহারকারীদের কাছে ‘আধুনিকতম’ স্মার্টফোন ছিল কানাডিয়ান ব্ল্যাকবেরি। কিবোর্ডযুক্ত ওই ফোনে ইমেইল এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করা যেত, জানিয়েছে রয়টার্স।
জবস আইফোনকে তিনটি জিনিসের সমন্বয় হিসেবে উপস্থাপন করেন: “স্পর্শের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন আইপড, যুগান্তকারী মোবাইল ফোন আর বাধাহীনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় এমন যোগাযোগকারী ডিভাইস।”
ব্ল্যাকবেরি’র মতো কিবোর্ডের পরিবর্তে এতে মাল্টি-টাচ পর্দা ব্যবহার করা হয়, যা টাচ পর্দা আর পিডিএ ডিভাইসগুলোর জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত।
এরপর থেকে প্রায় এক দশকে অ্যাপল কয়েকশ কোটি আইফোন বিক্রি করে বিশ্বের সবচেয়ে দামী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
আইফোনের বড় সাফল্য ছিল এই ফোন বাজারে আসার পরেই অ্যাপলের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ তার সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানদের ছাড়িয়ে যায়, যার মধ্যে মাইক্রোসফট আর গুগলও ছিল।
বিশ্লেষকরা একে ‘সাংস্কৃতিক প্রতিমা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, অন্যান্য সব আধুনিক স্মার্টফোনগুলো আইফোনকে অনুসরণ করে বানানো হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত আইফোনের ১১টি প্রজন্ম উন্মোচিত হয়েছে। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি আইফোনের বড় সংস্করণ আইফোন ৬ প্লাস চালু করে যা ছিল প্রথম ৫.৫ ইঞ্চি পর্দার স্মার্ট ফোন।
বিভিন্ন উপলক্ষে আইফোনের পর্দার আকারের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ফোনের নকশাতেও পরিবর্তন আনা হয় বহুবার।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে অগ্রগামী এই ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা উন্নতমানের ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতে পারেন। শুধু তাই নয়, আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে আইফোনের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে বিল পরিশোধ করার সুবিধাও রয়েছে এতে।
এতকিছু সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগীর চাপ আর বাজারে স্মার্টফোনের আধিক্যের কারণে এই ডিভাইসের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইফোনের বিক্রিতে ভাটা পড়ে ২০১৬ সালে। আইফোনের উচ্চমূল্যের কারণে এর স্থান দখল করে নেয় মাঝারি মূল্যের স্যামসাং, গুগল এইচটিসি আর হুয়াওয়ে’র মতো অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন।
আইফোনের পরবর্তী সংস্করণ সেপ্টেম্বরে বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন এই ফোনের সামনের পুরোটা জুড়েই পর্দা রাখা হতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় নতুন আইফোন হবে সম্পূর্ণ কাঁচের, এতে হোম বাটন থাকবে না। আকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এর মাধ্যমে তারবিহীন চার্জিং ব্যবস্থারও সূচনা হবে বলে শোনা যাচ্ছে।