নতুন ম্যাকবুক প্রো'র ভালো-মন্দ

চলতি বছর অক্টোবরে নতুন ম্যাকবুক প্রো ল্যাপটপ উন্মোচন করে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল। এই ল্যাপটপের নতুন আনা ফিচার আর এটি গ্রাহকদের প্রত্যাশা কতটা মিটিয়েছে তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2016, 06:22 AM
Updated : 15 Nov 2016, 06:23 AM

ইভেন্ট চলাকালীন নতুন এই ল্যাপটপ নিয়ে জানতে উদগ্রীব হয়ে বসেছিলেন এক সফটওয়্যার প্রকৌশলী, নাম অ্যাডাম লেভানথাল। পুরো অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখার পর ৩০ বছর ধরে ম্যাক ছাড়া অন্য কোনো কম্পিউটার ব্যবহার না করা এই প্রকৌশলী বলেন, "এটি নিয়ে আমি আসলেই হতাশ।" 

নতুন ল্যাপটপ হিসেবে ম্যাকবুক প্রো নিয়ে মতবাদে বিবাদ রয়েছে বলেই ভাষ্য মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর। এর কারণ হিসেবে আংশিকভাবে দায় দেওয়া হচ্ছে ল্যাপটপটির মডেলকে। ২০১২ সালের পর থেকে মূলত পেশাদার আর কোডারদের ব্যবহার করা এই ল্যাপটপ অনেকটা একই রয়ে গিয়েছে। এবার অ্যাপল যখন কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসে, দীর্ঘদিন ধরে ম্যাক ব্যবহার করা অনেকেই আশাবাদী হয়ে ওঠেন।

আগের সংস্করণের ম্যাকবুক প্রো ল্যাপটপগুলোতে কয়েক ধরনের কানেকশন পোর্ট থাকলেও, সর্বশেষ সংস্করণগুলোতে শুধু এক ধরনের পোর্ট রাখা হয়েছে। এর ফলে অন্য ধরনের কানেকটরের ডিভাইসগুলো এই ল্যাপটপে যুক্ত করতে ব্যবহারকারীদের আলাদা অ্যাডাপটার কেনার দরকার হবে।

নতুন এই ল্যাপটপের কিবোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এসকেপ কিসহ উপরের সারির কিগুলো, যোগ করা হয়েছে 'টাচ বার' নামের ভার্চুয়াল টাচ স্ট্রিপ। এই টাচবারের ভার্চুয়াল বাটনগুলো কোন অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে বদলাবে। এর ফলে কাস্টম শর্টকাট তৈরিতে সফটওয়্যার নির্মাতাদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। আগের সংস্করণগুলোর তুলনায় এই ল্যাপটপ আরও দ্রুত, হালকা ও চিকন। ব্যাটারির আয়ু বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ ঘণ্টা।

নতুন এই সংস্করণগুলোতে অ্যাপল পুরোপুরিভাবে নতুন প্রজন্মের ইউএসবি পোর্ট ইউএসবি-সি'র যুগে প্রবেশ করেছে। এই ছোট ও ডিম্বাকৃতির কানেকশন অনেক কম্পিউটিং ডিভাইস আর অ্যাকসেসোরিজ-এ ব্যবহৃত মোটা আর আয়তাকার ইউএসবি-এ পোর্ট-কে সামনের কয়েক বছরের মধ্যে সরিয়ে দেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।  

ম্যাকবুকে ইএসবি-সি পোর্টকেই ম্যাকবুক প্রো ল্যাপটপগুলোতে আনা সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখছে মার্কিন দৈনিকটি। আগের ম্যাকবুকগুলোতে প্রিন্টার আর মনিটরের সঙ্গে মতো কানেকটিং ডিভাইসগুলোকে যুক্ত করতে ইএসবি-এ পোর্টের সঙ্গে এইচডিএমআই পোর্টসহ অন্যান্য পোর্টও রাখা হয়েছিল। আর এখন চার্জিং, আলাদা স্ক্রিন ও ফটো-কার্ড রিডার যোগ করা সবকিছুতেই ইউসএবি-সি পোর্ট ব্যবহার করতে হবে। এন্ট্রি-লেভেল ম্যাকবুক প্রো মডেলটিতে ইউএসবি-সি পোর্ট রাখা হয়েছে দুটি, আর উন্নত সংস্করণগুলোতে আছে চারটি করে।

এ দিকে অ্যাপলের আইফোনের পাওয়ার কেবলেও ব্যবহার করা হয়েছে ইএসবি-এ কানেকটর, সেক্ষেত্রে আইফোনকে নতুন ম্যাকবুক প্রো-এর সঙ্গে যুক্ত করতে গেলেও কিনতে হবে নতুন অ্যাডাপ্টার, আর এ বিষয়টিকে 'বিরক্তিকর' হিসেবেই আখ্যা দেওয়া হয়েছে মার্কিন দৈনিকটির প্রতিবেদনে।    

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্রানসিসকোভিত্তিক প্রযুক্তি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান টেককালেকটিভ-এর একজন প্রযুক্তিকর্মী ব্রায়ান ডেনসলো জানান, দীর্ঘমেয়াদে অ্যাপলের ইউসবি-সি পোর্টে চলে যাওয়াটা এ খাতে একটি মান তৈরিতে সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যটা হচ্ছে ল্যাপটপের সঙ্গে প্রয়োজনীয় অন্য সব ডিভাইসে ইউএসবি-সি কানেকটর নিয়ে আসা, এর ফলে এক সময় আর বাড়তি অ্যাডাপ্টার কেনার প্রয়োজন পড়বে না। তিনি বলেন, "অবশেষে, আমরা অতীতের সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করে নতুন কোনো মান ঠিক করতে যাচ্ছি।" 

ছবি- রয়টার্স

এবার আসা যাক টাচ বার-এর কথায়। এই ফিচার নতুন এক হাওয়া লাগালেও, 'স্ট্রিমলাইনিং' কাজগুলোতে এটি খুব একটা সহায়ক হিসেবে ধরা দেয়নি বলেই বলা হয়েছে দৈনিকটির প্রতিবেদনে। স্ট্রিমলাইনিং কাজ বলতে কৌশল বা উপায় সহজ করার মাধ্যমে কার্যক্ষমতা বাড়ানো যায় এমন কাজগুলোকে বোঝায়। এ ক্ষেত্রে ফটোস অ্যাপ ব্যবহারের সময় লাইব্রেরির ফটোগুলোর থাম্বনেইল দেখানো হয়। ব্যবহারকারী যে ফটো এডিট করতে চান, তাতে ট্যাপ করেই ছবিটি সিলেক্ট করা যাবে। সাফারি ব্রাউজার ব্যবহারের সময় টাচ বার ব্যবহার করে ভিন্ন একটি ব্রাউজার ট্যাব সিলেক্ট করা যাবে। কিন্তু কিবোর্ড শর্টকার্ট (কমান্ড+প্রথম ট্যাবের জন্য ১) ব্যবহার করে তার আরও 'দ্রুত' করা সম্ভব।

কিবোর্ডের এসকেপ কি-কেও এখন সরিয়ে এনে টাচ বারে ভার্চুয়াল বাটন হিসেবে জায়গা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফিজিক্যাল এসকেপ কি কোডারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর কোডিংয়ের সময় এটি চাপতে না পারাটা অসমর্থনযোগ্য বলেই মত লেভেনথাল-এর। এমনকি টাচ বার ব্যবহারের পর টাচ বার ছাড়া সাধারণ কিবোর্ড ব্যবহারের সময় কিছু 'মিস করা' হচ্ছে বলেও মনে হয় না, জানিয়েছে দৈনিকটি।

অ্যাপল পণ্যের প্রতি অনুগত অনেক ব্যবহারকারীই নতুন ম্যাকবুক প্রো ল্যাপটপগুলোর মেমোরি সীমাবদ্ধতা আর হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে মত দিয়েছেন বলেও জানা যায়। নতুন মডেলগুলোতে আগের ম্যাকবুক প্রো সংস্করণগুলোর মতোই ১৬ গিগাবাইট র্যা ম ব্যবহার করা হয়েছে। প্রসেসরের গতিও রাখা হয়েছে প্রায় আগের পেশাদার নোটবুকগুলর মতো। তবে, কিছু ক্ষেত্রে পুরানো মডেলগুলোর তুলনায় নতুন নোটবুকগুলো বেশি দ্রুত। গিকবেঞ্চ ৪ নামের অ্যাপ দিয়ে পরীক্ষায় দেখা যায়, ১৫ ইঞ্চির নতুন ম্যাকবুক প্রো'র প্রসেসর ২০১২ সালে বের হওয়া একই আকারের মডেলের তুলনায় ১০ থেকে ১৭ শতাংশ বেশি দ্রুত। কম্পিউটিং টাস্ক-এর জন্য গুরত্বপূর্ণ গ্রাফিক্স কার্ড-এর ক্ষেত্রে, নতুন ম্যাকবুক প্রো'র গতি আগের চেয়ে দ্বিগুণ। আগের চেয়ে দ্রুত স্টোরেজ ডিভাইসও।

সবার জন্য দেওয়া যাবে এমন পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে ম্যাকবুক প্রো কেনা নিয়ে পেশাদার ম্যাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে নানা ভিন্ন মতবাদ রয়েছে। তবে, ওয়েব ব্রাউজিং আর সাধারণ অ্যাপ ব্যবহার করবেন এমন কোনো ব্যবহারকারীর জন্য ম্যাকবুক কিনতে দরকারের চেয়ে বাড়তি অর্থ খরচ হবে বলা যেতে পারে। যেখানে ডেল-এর একটি ক্রোমবুক আই৩-এর দাম পড়ে ৪৩০ ডলার সেখানে ম্যাকবুক এয়ার কিনতে গুণতে হয় হাজার ডলার। আর এটি হচ্ছে অ্যাপলের সবচেয়ে কমদামি নোটবুক, কিন্তু এটি ক্রোমবুকটির তুলনায় ধীরগতির আর নিম্ম রেজুলিউশনের। আর নতুন মডেলগুলো কিনলে বাড়তি স্টোরেজ আর অ্যাডাপ্টার কিনতেও গুণতে হবে বাড়তি অর্থ। 

নতুন ম্যাকবুক প্রো হয়তো অধিকাংশ পেশাদারের জন্য যথেষ্ট ক্ষমতাধর কম্পিউটার হবে। অ্যাপল জানিয়েছে, প্রথমদিকের অর্ডার হিসেবে আগের পেশাদার নোটবুকগুলোর তুলনায় ম্যাকবুক প্রো'র চাহিদা বেশি।