জালিয়াতি ঠেকাতে ডিজিটাল ডিসপ্লে'র ক্রেডিট কার্ড

জালিয়াতি প্রতিরোধে বাজারে চালু হতে যাচ্ছে নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড। এ ক্রেডিট কার্ডটির ডিজিটাল ডিসপ্লে এলোমেলোভাবে একটি নিরাপত্তা কোড তৈরি করবে, যা জালিয়াতি প্রতিরোধে সহায়তা করবে।

নাজিয়া শারমিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2016, 03:54 PM
Updated : 8 Oct 2016, 03:55 PM

বিবিসির তথ্যমতে, চলতি বছরের শেষের দিকে ফ্রান্সের গ্রাহকদের হাতে এ ধরনের ক্রেডিট কার্ড তুলে দিতে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে অবের্থার টেকনোলোজিস।

প্রতি বছর ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির জন্য লাখ লাখ পাউন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ক্রেডিট কার্ডের জন্য একটি ভিন্ন নকশা তৈরির প্রক্রিয়াতে অনেক দেরি করা হয়েছে।

সাররে ইউনিভার্সিটি'র সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যালান উডওয়ার্ড বিবিসিকে বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই এটি চালু হতে বেশ সময় লেগেছে।”

এ ক্রেডিট কার্ডটির পেছনে একটি মিনি স্ক্রিন থাকবে। এটি প্রতি ঘণ্টায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে এর স্ট্যাটিক প্রিন্টেড তিন ডিজিটের একটি নিরাপত্তা কোড পরিবর্তন করবে। কার্ডের এ প্রযুক্তি গ্রাহকদেরকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদান করবে। একটি পাতলা লিথিয়াম ব্যাটারি এর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এ ব্যাটারির নকশাটি তিন বছর ধরে তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

একবার এই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টাকা তোলার পর গ্রাহক তার ক্রেডিট কার্ডটির নিরাপত্তা কোড মনে রাখতে পারবেন না। অনলাইনে টাকা প্রদানের জন্য প্রতিবার তাদের কার্ড চেক করতে হবে।

কার্ডটি গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২০১৫ সালে একটি পাইলট স্কিম বের করেছে ফ্রেঞ্চ ব্যাংকস সোসাইটি এন্ড জেনারেল বিপিসিই। একই পাইলট স্কিম মেক্সিকো এবং পোল্যান্ডেও বের করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ফিনান্সিয়াল ফ্রড অ্যাকশন-এর তথ্যানুসারে ২০১৫ সালে জালিয়াতির ঘটনায় ৭৫ কোটি ৫০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড লোকসান হয়েছে। এ ছাড়াও ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস জানিয়েছে এ লোকসানে প্রায় ২০,২৫৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জালিয়াতেরা নানাভাবে ক্রেডিট কার্ডের বিস্তারিত তথ্য পায়। অনলাইন থেকে তথ্য গ্রহণ করে মেশিনে সংযুক্ত সকল তথ্য চুরি করে।

স্কিমারেরা ক্যাশ মেশিনে প্রায়ই একটি ডিভাইস যুক্ত করে রাখে। তা জাল এটিএম পিন প্যাড অথবা ওয়েব ক্যামেরার সাহায্যে কার্ডের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ এবং পিন কোড থেকে তথ্য চুরি করে।

সময়ের সঙ্গে এ নকশা আরও উন্নত হতে থাকে। ‘শিমার’ নামক একটি ডিভাইস আছে, যা কার্ডের চিপ থেকে তথ্য গ্রহণে সক্ষম। এ ছাড়াও বর্তমানে স্ক্যামারেরা ক্যাশ মেশিনে সরাসরি ম্যালওয়ার ছড়িয়ে দেয়।

জালিয়াতি মোকাবেলায় ব্যাংক নতুন নির্ভরযোগ্য সমাধান নিয়ে কাজ করছে। এটি বায়োমেট্রিকসের ভিত্তিতে তৈরি হবে, যা গ্রাহকেদের চিহ্নিতকরণে বেশি নিরাপদ।

কিন্তু এদিকে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কি ল্যাব জানিয়েছে, সাইবার অপরাধীরা ইতোমধ্যে নতুন এ প্রযুক্তিকে নষ্ট করার জন্য পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, স্কিমারদের ১২টি ডিভাইস দেওয়া হচ্ছে যা দিয়ে ব্যবহারকারীদের আঙ্গুলের ছাপ চুরিতে সক্ষম হবে। এ ছাড়াও তারা হাতের তালু, শিরা আর আইরিশ প্রযুক্তি চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি জালিয়াতি করার ক্ষেত্রেও গবেষণা করছে।

ক্যাসপারস্কি প্রধান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ডেভিড এম জানিয়েছেন, মোশন কোড চোরদের কার্ডটির তথ্য চুরির ‘সুযোগের জানালা হ্রাস করবে’। সেই সঙ্গে তিনি আরও জানিয়েছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে যদি নিরাপত্তা কোডটি অন্য ডিভাইস থেকে তৈরি করা হয়।