আইফোন হ্যাক নিয়ে মামলায় এফবিআই

ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান বার্নার্ডিনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে আসামীর আইফোন আনলক কীভাবে করা হলো, কারা এর জন্য অর্থ দিল, কত খরচ করা হল, তা নিয়ে জানাতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ আরও দুই সংবাদমাধ্যম।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2016, 04:51 PM
Updated : 17 Sept 2016, 04:51 PM

শুক্রবার ওয়াশিংটনের এক ফেডারেল আদালতে ফ্রিডম অফ ইনফরমেশন অ্যাক্ট-এর অধীনে এই মামলা দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।

এই মামলায় এফবিআই ওই আইফোন আনলকে সহায়তাকারী পরিচয় প্রকাশ না করা প্রতিষ্ঠানটির পরিচয়, ওই টুল ব্যবহারে খরচ, আর কীভাবে আইফোনটি আনলক করা হয় তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এর সঙ্গে আরও দুই সংবাদমাধ্যম হচ্ছে গ্যামেট আর ভাইস মিডিয়া।

সংবাদ সংস্থাগুলোর কাছ থেকে আসা এ সংক্রান্ত প্রশ্ন এফবিআই প্রত্যাখ্যানের কয়েক মাস পর এই মামলা দায়ের করা হল।

চলতি বছর এপ্রিলে এক প্রতিবেদনে জানা যায়, স্যান বার্নার্ডিনো হত্যাকাণ্ডে জড়িত এক বন্দুকধারীর এনক্রিপ্টেড আইফোন আনলক করতে কমপক্ষে ১৩ লাখ ডলার ব্যয় করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।

সে সময় এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, এফবিআই পরিচালক জেমস কমে-এর এক বিবৃতির উপর ভিত্তি করে স্যান বার্নার্ডিনো হত্যাকাণ্ডের আইফোন আনলকের পেছনে খরচ হওয়া অর্থের এই হিসাব করা হয়েছে। তিনি তাঁর একটি পোস্টে জানিয়েছেন, ফোন আনলক করতে সংস্থাটির যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা 'সামনের সাত বছরে তার উপার্জিত অর্থের চেয়ে বেশি'। আর অর্থের এই পরিমাণের জন্যই হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয়ের ঘটনা হিসাবে এটি পরিচিতি পেয়েছে। কমের মতে ওই খরচ ‘যথাযথ’।

কমের বাৎসরিক আয়ের উপর ভিত্তি করে এই হিসাব করা হয়েছে। ২০১৫ সালে জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে তার এই আয় ছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩শ' ডলার। তার আয়ের এই হিসাব থেকে তিনি আর যতদিন এই কাজে নিয়োজিত আছেন সে সময়ে মোট যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করবেন তা বের করা হয়েছে। কমে আর ৭ বছর ৪ মাস এ কাজে নিয়োজিত আছেন। এই হিসাবের উপর আয় বৃদ্ধি বা বোনাসের কোনো প্রভাব নেই।

এফবিআই কখনই ফোন আনলকে সহায়তাকারী নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান বা হ্যাকার দলের নাম প্রকাশ করেনি। তবে, এই সহায়তার পেছনে যারা রয়েছেন তারা অবশ্যই এমন কোনো সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার সরবরাহ করেছেন, যা চার ডিজিটের একটি আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার দিয়ে রাখা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম। এটি এমন একটি নিরাপত্তা ফিচার, যাতে ১০ বার ভুল অনুমান করা হলে সব তথ্য মুছে যাবে।

কমে জানিয়েছেন, এই একই প্রক্রিয়া আইওএস ৯ সফটওয়্যার চালিত ৫সি আইফোনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

আইএইচএস টেকনোলজি নামের এক গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, অ্যাপলের তথ্যানুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ এমন আইফোন ব্যবহার করে। এর মধ্যে আশি শতাংশ ফোনই আইওএস ৯ সফটওয়্যার চালিত।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সান বার্নাডিনোর এক প্রতিবন্ধী সেবা কেন্দ্রে গুলি চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করেন সৈয়দ রিজওয়ান ফারুক ও তার স্ত্রী তাশফিন মালিক। পরে পুলিশের গুলিতে তারা নিহত হন।

আইফোন এনক্রিপশনের ক্ষেত্রে অ্যাপলকে আইনগতভাবে বাধ্য করা উচিৎ হবে কিনা তা ছিল এফবিআই ও অ্যাপলের এ আইনি লড়াইয়ের প্রধান বিষয়। এ লড়াইয়ে প্রযুক্তি শিল্পের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই অ্যাপলকে সমর্থন জানিয়েছিল। তাদের মতে কর্তৃপক্ষের এমন ফিচার ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তাকে দুর্বল করে দেবে। অপর দিকে সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, তারা আইফোনে ‘অ্যাকসেস’ করে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে না বলে এ সংক্রান্ত সকল প্রকার তদন্ত পঙ্গু হয়ে যাবে।

আদালতের আদেশে এফবিআই-এর জন্য অ্যাপল-কে একটি 'ব্যাকডোর' তৈরি করে দিতে বলা হয়, আর এতে কোনোভাবেই অ্যাপল রাজি না হলে, শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালের মার্চে নিজেরাই 'তৃতীয় পক্ষের' সহায়তায় আইফোনটি খুলতে 'সক্ষম' হয়েছে বলে জানায় এফবিআই।

এফবিআই নিজেরাই আইফোনে ‘অ্যাকসেস’ করতে পেরেছে জানিয়ে বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা আদালতের ওই আদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। প্রসিকিউটররা জানান, ‘বাইরের একটি দল’ অ্যাপলের সাহায্য ছাড়াই আইফোন ‘আনলক’ করার একটি পদ্ধতি বের করেছে।