আসছে ‘প্রিজমা ভিডিও’

ঢাকায় একসময় রাস্তায় নতুন কোনো রিকশা নামানো হলেই, দেখা যেত রিকশার পেছনে হাতে আঁকা বিভিন্ন বাংলা সিনেমার দৃশ্য। সাম্প্রতিককালে এই একই ফরম্যাটে দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নিজেদের ছবি পোস্ট দিচ্ছেন, আর এজন্য তারা ব্যবহার করছেন এক অ্যাপ।

তাহমিন আয়শা মুর্শেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2016, 05:19 PM
Updated : 23 July 2016, 05:19 PM

প্রিজমা নামের এই অ্যাপের উম্মাদনায় ভাসছে গোটা বিশ্ব। শেষ ছয় বছরে অনেক ছবি এডিটিং অ্যাপ মুক্তি পেলেও কোনোটিই হয়ত সামাজিক মাধ্যমে প্রিজমার মতো সাড়া জাগাতে পারেনি। মুক্তি পাওয়ার আগে থেকেই রাশিয়ার তৈরি এই অ্যাপ সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ ছিল লাগামছাড়া। অ্যাপটির বিশেষত্ব হল এটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ক্যামেরায় তোলা সাধারণ ছবিকে ওই বিশেষ 'ডিজিটাল ফরম্যাটে' রূপান্তরিত করে।

কী এই প্রিজমা?

প্রিজমা হল রাশিয়ান এক অ্যাপ ডেভেলাপারের তৈরি একটি ছবি-এডিটিং অ্যাপ। এটি ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীরা স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের ছবি গ্যালারি থেকে ছবি নির্বাচন করতে পারেন বা ক্যামেরা দিয়ে নতুন ছবি তুলে নিতে পারেন। তারপর বিখ্যাত কিছু চিত্রশৈলী, যেমন - পিকাসো, মনে, ভ্যান গঘ, মাঞ্চ, 'ল্যাভিটান' আর 'ক্যান্ডিনস্কাই' সহ ৩৩টি বিভিন্ন ফিল্টার এবং ডিসি কমিক বইয়ের চিত্রণের মতো জনপ্রিয় নকশা দিয়ে 'নির্বাচিত' ছবিকে ‘এডিট’ করা হয়।

সেকেন্ডের মধ্যেই অ্যাপটি ছবি এডিট করে দেয়, যা ব্যবহারকারীরা তাদের ডিভাইসে সংরক্ষণ করতে পারেন বা টুইটার, ফেইসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কে শেয়ার করে নিতে পারেন।

অ্যাপটি জুনে ছাড়া হয়েছে এবং বর্তমানে শুধু আইওএস ডিভাইসে ব্যবহার করা যাচ্ছে। অ্যাপের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ নিয়ে এখনও কাজ চলছে। জুলাইয়ের শেষের দিকে এটি সব অ্যান্ড্রয়েডে সহজলভ্য হবে বলে আশা করা যাচ্ছে, জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস। বর্তমানে এটি আইটিউন্সের জনপ্রিয় অ্যাপগুলোর মধ্যে পঞ্চম।

প্রিজমা কীভাবে কাজ করে?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর নিউরাল নেটওয়ার্কের অদ্ভুত সমন্বয় করা হয়েছে 'প্রিজমা' তে। এটি গুগলের 'ইনসেপশনিজম' সফটওয়্যারের মতোই একটি সফটওয়্যার। ২০১৫ সালে গুগলের কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা এক গবেষণা চালায়, যাতে দেখা যায় কম্পিউটারে কল্পনাপ্রসূত এবং 'সাইকিডেলিক' ইমেইজ বা প্রতিচ্ছায়াবাদী শিল্প ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।

এর আগে গুগল 'নিউরাল' নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল, যাতে কম্পিউটার ছবির মাধ্যমে মানুষ, বস্তু আর প্রাণীদের চিহ্নিত আর একই সঙ্গে তাদের চিন্তা-ভাবনা চিত্রিত করতে পারে। নেটওয়ার্কের বিভিন্ন স্তর বিভিন্ন রকম ছবি-কে বিচার বিশ্লেষণ করে এর ভিত্তিতে কিছু উত্তর প্রণয়ন করে। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গুগলের 'ডিপ ড্রিম' সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছিল, যাতে কোনো একটি ছবিকে সহজে অনেকগুলো মেঘ বা প্রাণীর মুখমণ্ডল বা গা ছমছমে চোখের সমষ্টি হিসেবে কল্পিত চিত্ররূপে প্রকাশ করা যায়।

প্রিজমা-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেক্সি ময়সিনকভ প্রযুক্তি সাইট টেকক্রাঞ্চ-কে বলেন, "প্রিজমাতে তিনটি নিউরাল নেটওয়ার্কের সমন্বয় করা হয়েছে। এর প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন কাজ সম্পাদনার মাধ্যমে প্রকৃত ছবি থেকে বিখ্যাত আর্টওয়ার্কের মাধ্যমে নতুন শিল্প শৈলীতে রূপান্তর করে।"

"আমরা শুধু ইনস্টাগ্রাম ফিল্টার মতো এডিট করছি না, বরং গোড়া থেকে একটি ছবি তৈরি করছি। আপনার একটি ছবি নেওয়ার পর কতগুলো কাজ করা হয় এবং তারপর আমরা নতুন ছবি দিচ্ছি আপনার কাছে। তাই এই অ্যাপটি একজন শিল্পীর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।"

কেমন করে ফোনে 'প্রিজমা' পাবেন?

আইওএস ফোন থেকে প্রিজমা ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি নামানো যায়। তবে, অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা প্রিজমা ওয়েবসাইটে এখনও 'শীঘ্রই আসছে' এমন বার্তা পাবেন। তার নিচে দেখানো 'সাইন আপ' বাটন দেখতে একটি সাধারণ সাইন আপ আমন্ত্রণ মনে হলেও এটি আরও বেশি কিছু। 'দ্য নেক্সট ওয়েব'-এর তথ্যানুসারে, এই অপশনের মাধ্যমে নিউজলেটারে অ্যান্ড্রয়েড বেটা প্রোগ্রামে অংশ নিতে ব্যবহারকারীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, জানিয়েছে প্রযুক্তি সাইট টেক ইনসাইডার।

নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রিজমা জানিয়েছে, তারা সাইনআপ করে রাখা গ্রাহকদেরকে ১৯ জুলাইয়ের পর থেকে অ্যাপের বেটা সংস্করণ পাঠানো শুরু করেছে। অ্যান্ড্রয়েডে এই সংস্করণ পেতে কেবল ব্যবহারকারীর নাম আর আইডি দিয়ে রাখতে হবে। এরপর শীঘ্রই প্রিজমা ব্যবহারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে।

আসছে 'প্রিজমা ভিডিও'

ময়সিনকভ জানান, তারা ইন্টারনেটে ছবি এডিটিংয়ের জন্য বিদ্যমান কম্পিউটার অ্যালগরিদমকে প্রায় দুই মাস চেষ্টা করে উন্নত করেছেন। এর ফলে উন্নত অ্যালগরিদমটি এক ঘণ্টা বা ১০ মিনিট নয়, বরং তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করবে। কিন্তু তারা এখানেই থেমে যেতে চান না।

বর্তমানে তারা অ্যালগরিদমটি এমনভাবে উন্নত করতে চাচ্ছেন যাতে এর মাধ্যমে একটি মোবাইল ভিডিও ক্লিপ নেওয়া সম্ভব হয় এবং লাইভ অ্যানিমেটেড দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা যায়।

এখানে যথেষ্ট কম্পিউটিং শক্তি খরচ হচ্ছে। ফলে প্রিজমা ব্যবহারের জন্য সার্ভারগুলোকে অনেক শক্তিশালী হতে হচ্ছে যাতে একই সময়ে অনেকে লগইন করার জন্য 'পকিমন গো' ব্যবহারকারীরা যেমন বিভ্রাটের সম্মুখীন হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।