৩০ জুলাই রাজধানীর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জিডিএলএন সেন্টারে ‘ন্যানোস্যাটেলাইট পসিবিলিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্সেস ক্লাব। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আরিফুর রহমান খান। সভায় তার আনুষ্ঠানিক বক্তব্যেই মিললো ন্যানো-স্যাটেলাইট প্রযুক্তিখাতে বাংলাদেশের উজ্জল সম্ভাবনার আভাস।
স্পেসক্র্যাফটের চার্জিং প্রশমিত করতে ইলেকট্রন এমিটিং ফিল্ম (ইএলএফ)-এর উদ্ভাবক ড. আরিফুর বর্তমানে প্যাচ অ্যান্টেনা, ইনসুলেটরের মাধ্যমে চার্জ পরিবহন, অ্যাটমিক অক্সিজেন আর স্পেসক্র্যাফটের উপাদানের উপর অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব নিয়ে কাজ করছেন।
সভার শুরু থেকেই উপস্থিত শিক্ষার্থীদের চেহারায় ছিল ন্যানোস্যাটেলাইট আর ড. আরিফুর রহমান খানের অভিজ্ঞতা শোনার জন্য আগ্রহের ছাঁপ। সভা শুরু করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অফ ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড ন্যাচারাল সায়েন্সেসের চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন কেন্দ্র (স্পারসো)-এর সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু আবদুল্লাহ জিয়াউদ্দিন আহমাদ। যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও প্রযুক্তির অগ্রগতি সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন-- বলেন তিনি।
এরপর তিনি ড. আরিফুর রহমান খানকে তার বক্তব্য শুরু করার অনুরোধ করেন। ২০০৪ সালে ল্যাবরেটরি অফ স্পেসক্র্যাফট এনভায়রনমেন্ট ইন্টার্যাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ল্যাসাইন)-এ যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে নিজের বক্তব্য শুরু করেন তিনি। বর্তমানে ল্যাসাইনে ১১ জন কর্মী কর্মরত আছেন। এখন তারা স্পেসক্র্যাফট চার্জিং, হাইপারভ্যালোসিটি ইমপ্যাক্ট আর ম্যাটারিয়াল ডিগ্রেডেশনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান ড. আরিফুর। এরপর প্রেজেন্টেশন স্লাইডে পরীক্ষাগারের বিভিন্ন ছবি প্রদর্শন করে বর্ণনা করেন তিনি।
বাংলাদেশের জন্য ন্যানো-স্যাটেলাইট খুবই লাভজনক হবে বলে মনে করেন ড. আরিফুর। এর মাধ্যমে দেশের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, কৃষি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ আরও বিভিন্ন খাতে-এর ব্যবহার ব্যাপক অগ্রগতি আনবে বলে মনে করেন তিনি। এজন্য বাংলাদেশকে বেশ সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আর খরচ অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় আর ছোট পরীক্ষাগারেই বানানো সম্ভব ন্যানোস্যাটেলাইট। তাই বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান ড. আরিফুর। সুবিধাজনক হওয়ায় উন্নত বিশ্বে ন্যানোস্যাটেলাইটের ব্যবহার যে দিন দিন বাড়ছে তা গ্রাফের মাধ্যমে দেখান তিনি।
নিজের সর্বশেষ কাজের ব্যাপারেও জানান ড. আরিফুর। ল্যাসাইনের তৈরি ‘হরইও ১’ ন্যানো-স্যাটেলাইট বানানো পর তা ভারতের তৈরি একটি রকেটের মাধ্যমে উত্থাপন করার কথা ছিল বলে জানান ড. আরিফুর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নকশার জটিলতার কারণে তা উত্থাপন করা যায়নি। এরপর তারা বানান ‘হরইও ২’। ৩০ ঘন সেন্টিমিটারের এ ন্যানো-স্যাটেলাইটটি মহাকাশ থেকে তথ্য ও ১৬৮X১২৮ পিক্সেলে ছবি পাঠাতে সক্ষম। ২০১২ সালে ‘হরইও ২’ উত্থাপন করা হয়েছে।
পরবর্তী প্রকল্প ‘হরইও ৪’-এ ড. আরিফুর রহমান খান ফ্যাকাল্টি আর বাংলাদেশের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্র আবদুল্লাহ এইচ কাফি ও মায়সুন ইবনে মনোয়ার শিক্ষার্থী হিসেবে ‘অ্যাটিটিউড ডিটারমিনেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম (এডিসিএস)’ কাজ করেছেন। স্লাইডে তাদের ছবি দেখানোর পর হাততালিতে ভরে উঠে সভাকক্ষ। তাদের দুজনের সঙ্গে এবার যোগ হয়েছেন রায়হানা শামস ইসলাম অন্তরা। চলতি বছর অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া সেশনে কেআইটিতে এম. এসসি করতে যাচ্ছেন তারা।
ল্যাসাইনে নিজের কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে মায়সুন ইবনে মনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যাটেলাইট ইঞ্জিনিয়ারিং মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি যথাযথ সংমিশ্রণ। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বেশ চমৎকার সময় পার করেছি। এখাতে আমি যতদূর সম্ভব যাওয়ার চেষ্টা করব। সারাবিশ্বের মেধাবীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির জন্যও এটি একটি চমৎকার মাধ্যম।”