ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজ: ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের

অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রামের একটি ব্রোকারেজ হাউজের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার পরও লেনদেন চালু দেখিয়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2022, 03:10 PM
Updated : 24 May 2022, 04:22 PM

মঙ্গলবার সকালে পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে বিনোগকারীরা সংবাদ সম্মেলনে ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে তারা এ অভিযোগ করেন।

মোহাম্মদ আইয়ুব খান নামে একজন বিনিয়োগকারী জানান,গতবছর মার্চে ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “কিন্তু এই ব্রোকারেজ হাউজ বিনিয়োগকারীদের বিষয়টি বুঝতে দেওয়নি। তারা নকল লেনদেনের সফটওয়্যার ব্যাবহার করে মিথ্যা লেনদেন দেখিয়ে আসছিল।

“কিন্তু টাকা চাইলে বিনিয়োগকারীদের সাথে টাল-বাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে সন্দেহ হলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার সরিয়ে নিতে যায়, তখন ধরা পরে ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজের লেনদেন আগে থেকেই বন্ধ।”

অবশেষে এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রোকারেজ হাউজটির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানান আইয়ুব খান।

বিষয়টি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) জানানো হলেও কোনো প্রতিকার না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে জানায়।

সেখান থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হন বলে জানান বিনিয়োগকারীরা।

মোহাম্মদ আইয়ুব খান বলেন ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজের বিও একাউন্টে তার ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার ও টাকা ছিল। আরেক বিনিয়োগকারী কৃষ্ণ রায় জানান তিনি ৩০ লাখ টাকা হারিয়েছেন।

বিনিয়োগকারী খাইরুন নাহারের পক্ষে তার স্বামী মোহাম্মদ আলী ৩৫ লাখ টাকা পান বলে জানান। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের মোট ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঝুনু চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“আমাদের লেনদেন বন্ধ আছে। বিএসইসি আমাদের লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে।

“আমাদের কাছে ‍কিছু লোক টাকা পায়, সেগুলো কিভাবে ফেরত দেওয়া যায় সেগুলো আমরা দেখছি।”

তবে ‘মিথ্যা নকল লেনদেনের’ সফটওয়্যার ব্যাবহার করে ‘মিথ্যা লেনদেন’ করার বিষয়টি অস্বীকার করে ঝুনু চৌধুরী বলেন, “বিএসইসি লেনদেন বন্ধ করার পরে আমরা কোনো লেনদেন করিনি।”

কিন্তু গতবছর মার্চে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার পরও লেনদেন হয়েছে এমন প্রমাণ থাকার দাবি করে বিনিয়োগকারীরা বলছেন,এবছর জানুয়ারি মাসেও বিনিয়োগকারীদের তারা পোর্টফোলিও স্টেটমেন্ট পাঠিয়েছে।

সেখানে তাদের নামে টাকা ও শেয়ার আছে দেখালেও সব শেয়ারের জিম্মাদার সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এ খবর নিয়ে বিনিয়োগকারীরা জেনেছেন সেসব তথ্য ঠিক নয়। ফার্স্টলিড সিকিউরিটিজ আগেই এসব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে।

এসব ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের তীর ছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের(সিএসই) দিকেও।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিংয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তানিয়া বেগম বলেন,“সিএসই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আমরা বিএসইসি থেকে কিছু নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।”

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“বিষয়গুলো নিয়ে নির্দিষ্ট বিভাগ কাজ করছে। বিষয়গুলো শেষ হতে সময় লাগে।”

বন্ধ করে দওয়া ব্রোকারেজ হাউজে কিভাবে লেনদেন হল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বন্ধ হয়ে গেলে তো আর সেখানে আমাদের লোকজন পরীক্ষা করতে যায় না।”

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন,“ বন্ধ করে দেওয়া ব্রোকারেজ হাউজে কিভাবে লেনদেন হল বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।”