সোমবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই কমিশনার।
গত বৃহস্পতিবার থেকে ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর খবরে কয়েক দিনে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যে সূচক কমেছে সেটা অযৌক্তিক বলেও মনে করেন তিনি।
গত দুই দিনে ঢাকার পুঁজিবাজারে প্রায় ২৭৩ পয়েন্ট সূচক কমেছে। এছাড়া গত ১০ দিনের মধ্যে ৭ দিনই দেশের পুঁজিবাজারে সূচক কমেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন কমে গেছে।
বিএসইসি কমিশনার বলেন, “আমি এর কারণ খুঁজে বের করার অনেক চেষ্টা করেছি। এর মধ্যে দুটি কারণ গণমাধ্যমগুলোতে বেশি এসেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তেলের দাম।”
ইউক্রেইনে যুদ্ধ শুরু হওয়া, তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং মাসের শেষ হওয়াকে গত দুই দিনে পুঁজিবাজারে বড় পতনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
আগের দুই দিন বেশিরভাগ শেয়ারের দাম অনেক কমে যাওয়ায় এদিন অনেকেই সে সুযোগ নিয়ে শেয়ার কিনতে শুরু করেন। এ কারণেই অনেকে শেয়ার কেনায় আগ্রহী হলে বাজারে পতন থামে।
শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন “রাশিয়া-ইউক্রেইনের যুদ্ধ আমাদের দেশের অর্থনীতির সাথে কতটুকু সংযুক্ত সেটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। রাশিয়ার অর্থনীতি পৃথিবীর মধ্যে ১২তম অর্থনীতি।
“এটি প্রথম ৫টি বা ১০টির মধ্যে নেই। আর বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের ৩৫ তম অর্থনীতি, আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতি হব। আমাদের কিন্তু সেরকম ডিপেন্ডেন্সি নেই রাশিয়ার উপর।”
সূচক কমার কারণ হিসেবে নেগেটিভ ইকুইটির কোনো খারাপ প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ার সুযোগ নেই জানিয়ে বিএসইসি কমিশনার বলেন “আরেকটি বিষয় হচ্ছে নেগেটিভ ইকুইটি এটি একটি রিডান্ডেন্ট তথ্য।
“আমরা ২০১৫ সাল থেকে নেগেটিভ ইকুইটি সমন্বয় করার সময় বাড়িয়ে আসছি। সর্বশেষ সময় আছে ২০২২ সালে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে, এখন কিন্তু মাত্র ফেব্রুয়ারি মাস, আমরা কিন্তু সময় আরও বাড়িয়ে দিতে পারি।
“এর কারণেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কোনো খারাপ প্রভাব পরতে পারে না। ফলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যে খারাপ প্রভাব পড়েছে সেটা অযৌক্তিক।”
“কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি সেই অর্থে বিপুল পরিমানে ওপেন অর্থনীতির নয়। তাছাড়া আমাদের দেশে কিন্তু তেলের দাম অস্বাভাবিক হয়ে থাকেনি।”
বৃহস্পতিবার ইউক্রেইনে রাশিয়ার ‘সামরিক অভিযান’ শুরুর পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারে উঠে যায়, দরপতন ঘটে পুঁজিবাজারে।
শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশে ২০১০ সালে একসময় তেলের দাম ১৪০ ডলারে উঠেছিল। আর এটা পরশুদিন ছিল ১০০ ডলারের ওপরে। আজকে তেলের দাম হয়েছে ৭৬ ডলার।
“আগে যখন তেলের দাম বেড়েছিল তখন আমরা আমাদের দেশে তেলের দাম স্বাভাবিক রাখতে পেরেছি। ফলে তেলের দামের প্রভাবও বাংলাদেশে সেভাবে আসবে না।”
রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে ‘ইকোনমিক পলিসি ট্রায়াঙ্গেল: ইন্টার রিলেশনশিপ অ্যামং ফিসক্যাল, মানিটরি অ্যান্ড ক্যাপিটাল মার্কেট পলিসিস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
যৌথভাবে এর আয়োজন করে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) এবং বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটি মার্কেটের (বিএএসএম)।
বিএএসএম মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ, বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, সিরডাপের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মাদ হেলাল উদ্দিন, বিআইবিএম অধ্যাপক ড. শাহ মোহাম্মদ আহসান হাবীব এবং সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমান।