ছয় দিনে ডিএসইতে সূচক কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশ

পতনের বৃত্তে থাকা দেশের পুঁজিবাজার আবারও বড় গোত্তা খেয়েছে; সপ্তাহের শুরুটাই হয়েছে ৭৮ পয়েন্ট দরপতন দিয়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2021, 01:31 PM
Updated : 28 Nov 2021, 01:31 PM

এ নিয়ে টানা ছয় দিনের পতনে ঢাকার পুঁজিবাজারে সূচক কমেছে ৩১৮ পয়েন্ট, শতকরা হিসাবে সাড়ে চার শতাংশ। এর প্রভাবে লেনদেনও কমে নেমে এসেছে হাজার কোটি টাকার নিচে, যা সাত মাসের মধ্যে কম।

গত ১৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ছিল ৭ হাজার ৯২ পয়েন্ট। এরপর গত ২১ নভেম্বর রোববার থেকে পতন শুরু হয় পুঁজিবাজারে, যা চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববারও অব্যাহত রয়েছে।

এদিন ৭৮ পয়েন্ট কমে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৮৪ পয়েন্টে। সূচকের এ অবস্থান গত তিন মাসের মধ্যে কম।

এদিন ব্ড় পতন হয়েছে দেশের অপর পুঁজিবাজার সিএসইতেও। এ বাজারের প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২১৬ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৯ হাজার ৮৪ দশমিক ২১ পয়েন্টে।

টানা পতনের বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতির অধ্যাপক আবু আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মনে হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হাত গুটিয়ে বসে আছে। তারা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। এখন আর কিনছে না। বড় বিনিয়োগকারীরাও আপাতত শেয়ার কিনছেন না।

অপরদিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা শেয়ার কিনেছিলেন গত কয়েক দিনের পতনে তারাও এখন অপেক্ষা করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে বাজারে কিছু নীতিগত সমস্যা আছে। সেগুলো ঠিক করলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়বে।”

তবে ভিন্ন মত দিচ্ছেন আরেক পুঁজিবাজার বিশ্লেষক

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মো. মুসা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশের পুঁজিবাজারের সূচক অনেক বেড়েছিল। সেই হিসাবে এরকম মূল্য সংশোধন হতে পারে। এর বাইরে অসুস্থ খালেদা জিয়ার অবস্থা আরও খারাপ হলে কী রিপারকেশন হয় সেটা একটা বিষয়।

“এছাড়া করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েশন দেখা দিয়েছে। সেটার কারণে যদি ইউরোপ বন্ধ হয়ে যায় তার একটা ভয় আছে। এগুলোর প্রভাব পুঁজিবাজারের ওপর পড়েছে।“

বাজার চিত্র

এদিন দিনের শুরুটাই হয়েছিল নিম্নমুখী প্রবণতায়। প্রথম আধা ঘণ্টাতেই ডিএসই সূচক আগের দিন থেকে ৩৬ পয়েন্ট কমে যায়। ৪৮ মিনিটের তা নেমে যায় ৫৯ পয়েন্টে। এরপর বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালালে সোয়া ১২টার দিকে সূচক আগের দিনের কাছাকাছি যায়।

তবে এ স্থান থেকে আবার পতন শুরু হলে দিন শেষে ডিএসইএক্স আগের দিন থেকে ৭৮ দশমিক ১৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৪ শতাংশ কমে ৬ হাজার ৭৭৩ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে নেমে যায়।

সূচকের এ পতন তিন মাস ৯ দিনের মধ্যে কম। এর আগে এর চেয়ে সূচক কম ছিল ১৯ অগাস্ট। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৭৬০ দশমিক ৬২ পয়েন্টে।

এদিন লেনদেনও আগের দিনের তুলনায় ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ বা ১২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা কমে ৮৩৭ কোটি ১০ লাখ টাকায় নেমেছে। আগের কর্মদিবসে যা ছিল ৮৪৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

এ লেনদেন সাত মাস এক দিনের মধ্যে কম। এর আগে এরচেয়ে কম লেনদেন ছিল ২৭ এপ্রিল। সেদিন শেয়ার কেনাবেচা হয় ৮২৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

রোববার ডিএসইতে ৩৭২টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৬টির ও কমেছে ২৯১টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির দর।

ঢাকার অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১৩ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৪২৯     দশমিক ৩৩ পয়েন্টে।

ডিএস৩০ সূচক ২৬ দশমিক ৭০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৫৭৬ দশমিক ১৭ পয়েন্টে।

লেনদেনের শীর্ষ ১০টি কোম্পানি

বেক্সিমকো লিঃ, ওয়ান ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, অরিয়ন ফার্মা,  সাইফ পাওয়ার ও এনআরবিসি ব্যাংক। 

দাম বাড়ার তালিকায় শীর্ষ ১০টি

সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, একমি পেস্টিসাইড, আজিজ পাইপস, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, আমান ফিড মিল, রহিম টেক্সটাইল, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড,  বিকন ফার্মা, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ও শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। 

বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানি

তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, কুইন সাউথ টেক্সটাইল, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, এস আলম কোল্ড রোল্ড, বিআইএফসি, হাওয়া ওয়েল টেক্সটাইল, দেশবন্ধু পলিমার, এইচ আর টেক্সটাইল, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল ও  পেনিনসুলা চিটাগং।

এদিন দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২৬৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫১টির, কমেছে ১৯২টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির দর।

রোববার এই বাজারে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ১০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বা ৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বেড়েছে।

এদিন মোট ৩৯ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা

আগের দিন ছিল ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।