মার্চেন্ট ব্যাংকের বন্ড ছাড়ার প্রস্তাবে বিএসইসির সায়

দেশের পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে মার্চেন্ট ব্যাংকের বন্ড ইস্যুর প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার পাশাপাশি ‘স্থিতিশীলতা তহবিলের’ অর্থ বাজারে আনার বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2021, 05:00 PM
Updated : 19 Oct 2021, 05:00 PM

মঙ্গলবার টানা সাত দিনের দরপতনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ডাকা জরুরি বৈঠকে বন্ড ছাড়তে মার্চেন্ট ব্যাংককে সবুজ সংকেত দেওয়ার কথা জানান কমিশনের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম।

আগের দিন সাড়ে তিন মাসের মধ্যে বড় পতনের পর মঙ্গলবার সূচক আরও বেশি হারে নিম্নমুখী হয়ে যায় দুই বাজারে। টানা সাত দিনের পতনে প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে সূচক কমে ৩৪৭ পয়েন্ট।

মঙ্গলবার দিনের শুরুতে সূচক যতটুকু বেড়েছিল, দিন শেষে বিনিয়োগকারীদের হতাশা বাড়িয়ে সূচক কমে প্রায় ততটুকুই। একদিনে সূচকের ওঠানামা হয় দেড়শ পয়েন্টের বেশি।

এমন প্রেক্ষাপটে বিএসইসিতে শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা এবং এই দুই প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। 

কমিশনের সভাকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও মো: সাইফুর রহমান, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান, ঢাকা ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেনসহ বেশ কিছু মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বৈঠকে প্রস্তাব করা হয় বন্ড ইস্যু করে অর্থ উত্তোলন করলে সেই টাকা মার্চেন্ট ব্যাংক বিনিয়োগকারীদের ঋণ হিসেবে দিতে পারবে। আবার নিজেরাও শেয়ার কিনতে পারবে।

“এ প্রস্তাবে সায় দিয়েছে বিএসইসি।“

পাশাপাশি ‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল’ থেকে মার্চেন্ট ব্যাংকের ইস্যু করা বন্ড সাবস্ক্রাইব করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান।

রেজাউল বলেন, “বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড থেকে মার্চেন্ট ব্যাংকের ইস্যু করা বন্ড সাবস্ক্রাইব করা যাবে।“

বৈঠকে পুঁজিবাজারে তারল্য কিভাবে বাড়ানো যায় সেটির পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ের প্রবৃদ্ধি টেকসই করার বিষয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়।

বৈঠকে গত কয়েকদিনের দরপতনকে স্বাভাবিক সংশোধন বলে বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বলে বিএসইসি মুখপাত্র উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “এই পতন কাটিয়ে পরের কার্যদিবস থেকে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে সবাই আশা প্রকাশ করেছেন।“

বৈঠকে জানানো হয়, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে ইতিমধ্যে অবণ্টিত লভ্যাংশের বেশ কিছু টাকা জমা পড়েছে। এ অর্থও কিভাবে পুঁজিবাজারে আনা যায় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

এছাড়া পুঁজিবাজারে তারল্য সঙ্কট কাটাতে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকার যে তহবিল দিয়েছিল, সেটির অব্যবহৃত টাকা যাতে দ্রুত মার্চেন্ট ব্যাংক পায় সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও বৈঠকে জানানো হয়েছে।

বৈঠকে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো সাম্প্রতিক সময়ে যে মুনাফা করেছে, তা যাতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আসে সেজন্য   ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে দুই বছর স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে নগদ টাকা দেশের পুঁজিবাজারে ঢুকবে বলে উল্লেখ করেন রেজাউল করিম।

এছাড়া ব্যাংকগুলো নির্ধারিত বিনিয়োগসীমা পর্যন্ত যাতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আগামী বৈঠকে অনুরোধ করা হবে বলে তিনি জানান।

এসব কাজ করা হলে দেশের পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি আরও টেকসই হবে বলে জানান কমিশনের মুখপাত্র।