এসএমই বোর্ড: ‘আরেক ধাপ এগিয়ে গেল’ পুঁজিবাজার

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের আলাদা প্ল্যাটফর্ম ‘এসএমই বোর্ড’ চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ‘আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার মিজানুর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2021, 02:46 PM
Updated : 30 Sept 2021, 02:47 PM

বৃহস্পতিবার সকালে ডিএসইতে এসএমই বোর্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নিজস্ব ভবনে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মিজানুর রহমান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বলেছেন বাংলাদেশের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে দেশের বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত।

এ খাতে উদ্যোগের সংখ্যা যে অনেক বেশি এবং সেখানে যে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার অসীম সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে সুদের হার কমিয়ে দিয়েছেন। আর আজকে ক্ষুদ্র মাঝারি কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের আলাদা প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করা হল। এর ফলে এই খাতের উন্নয়ন যেমন হবে, সেই সাথে বিনিয়োগকারীরাও উপকৃত হবে।”

ঢাকার নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে বৃহস্পতিবার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য একটি এসএমই প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএসইসি কমিশনার মিজানুর রহমান। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, “আজকে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের আরো বাড়তি ৯২৮ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দরকার। এই টাকাটা আমাদের সাধারণ যে অর্থায়ন, তার বাইরে দরকার হবে।

“এর মধ্যে দেশের ভেতর থেকে আসতে হবে প্রায় ৮৫ শতাংশ বা ৭৯৬ বিলিয়ন ডলার। আর বিদেশ থেকে ১৩২ বিলিয়ন ডলার আনতে হবে। এই অর্থায়ন ব্যাংক করতে পারবে না। এই টাকা আসতে হবে আমাদের পুঁজিবাজার থেকে।”

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে ৭৮ লাখ এসএমই প্রতিষ্ঠান আছে। এর সাথে জড়িত আছে ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ। এই খাত জিডিপির ২৫ শতাংশের যোগান দেয়। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। 

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এসএমই বোর্ড

বৃহস্পতিবার ছয়টি কোম্পানি নিয়ে ডিএসইতে এসএমই বোর্ডের লেনদেন শুরু হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে বিনিয়োগ সংগ্রহ করা ওরাইজা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, মাস্টার ফিড এগ্রোটেক এবং ওটিসি মার্কেট থেকে আসা এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিমিটেড, ওয়ান্ডার ল্যান্ড টয়েস লিমিটেড, হিমাদ্রী লিমিটেড ও বেঙ্গল বিস্কুট লিমিটেড।

স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন উত্তোলনের সুযোগ দিতে মূল লেনদেন প্ল্যাটফর্মের বাইরে বিশেষ এ বোর্ড চালু করেছে ডিএসই। সেজন্য আলাদা বিধিও করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

ঢাকার নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে বৃহস্পতিবার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য একটি এসএমই প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

পুঁজিবাজারে ৩০ কোটি টাকার নিচের স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ার এই এসএমই বোর্ডে লেনদেন হবে। পর্যায়ক্রমে মূল মার্কেটে থাকা স্বল্প মূলধনী অন্য কোম্পানিগুলোকেও এ বোর্ডে আনার পরিকল্পনা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

ডিএসইর নিয়ম অনুযায়ী, যাদের এক কোটি টাকার বেশি শেয়ারে বিনিয়োগ থাকবে, কেবল তারাই এ বোর্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

পাশাপাশি পুঁজিবাজারে যেসব দেশি বা বিদেশি ব্যক্তির অন্তত ৫০ লাখ টাকার বিনিয়োগ আছে, তারাই এসএমই বোর্ডের আইপিওতে বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন সবাই।

মূল বোর্ডের মত এসএমই বোর্ডের তালিকাভুক্ত শেয়ারে কোনো ক্যাটাগরি থাকবে না। এ বোর্ডের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে ‘এস’ সংকেত দেওয়া থাকবে।

মূল বোর্ডের ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির মত হবে এসএমই বোর্ডের শেয়ারের সেটেলমেন্ট সময়। শেয়ার কিনতে মার্জিন ঋণ নেওয়া যাবে এবং নিটিং করা যাবে। এ বোর্ডে লেনদেনে খরচ হবে মূল বোর্ডের মত।

এ পর্যন্ত পাঁচটি এসএমই কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তোলার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। কোম্পানিগুলো হল- নিয়ালকো অ্যালয়, মোস্তফা মেটাল, ওরাইজা অ্যাগ্রো, মাস্টার ফিড এগ্রোটেক ও কৃষিবিদ ফিড।

এর মধ্যে নিয়ালকো অ্যালয়ে টাকা তুলেছে এবং সিএসইতে লেনদেন হচ্ছে। ডিএসইতে লেনদেনের জন্য এখনও তালিকাভুক্তি পায়নি।

মোস্তফা মেটালের সাবস্ক্রিপশন চলেছে এবং কৃষিবিদ ফিডের সাবস্ক্রিপশন আগামীতে শুরু হবে।

প্রথম দিনের লেনদেন

দশ টাকায় তালিকাভুক্ত হওয়া ওরাইজা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দাম এদিন বেড়ে ১২ টাকা হয়েছে। লেনদেন হয়েছে মোট ৫১টি শেয়ার।

মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের ১০ টাকার শেয়ারের দামও ১২ টাকায় উঠেছে, লেনদেন হয়েছে মোট তিনটি শেয়ার।

বেঙ্গল বিস্কুট লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১৩ টাকা ৩০ পয়সায়। হাতবদল হয়েছে মোট সাতটি শেয়ার।

এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিমিটেড ১৪ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হয়েছে মোট ১৮টি শেয়ার।

ওয়ান্ডার ল্যান্ড টয়েস লিমিটেডের শেয়ার ১৯ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। মোট ৬টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে এ কোম্পানির। হিমাদ্রী লিমিটেডের কোনো শেয়ার প্রথম দিন লেনদেনে হয়নি ।