রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডে ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স বাংলাদেশের প্রতিনিধি মোয়াল্লেম চৌধুরী বলছেন, তারা নিয়ম শিথিলের আবেদন করলেও এখনই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন- বিষয়টা এমন নয়।
অবশ্য বিএসইসির অনুমোদন পেলে ব্রামার্স শেয়ার বিক্রি করবে না, সে কথাও তিনি বলেননি।
তাদের ওই আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা যে আবেদন করেছে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে ওই আবেদনে ঠিক কী বলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি নিয়ন্ত্রক সংস্থার মুখপাত্র।
সুইডেনের সবচে বড় হেজ ফান্ড ম্যানেজার ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স এর সহযোগী কোম্পানি ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স বাংলাদেশ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রানার অটোমোবাইলসের ২৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কোনো কোম্পানি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার তিন বছরের মধ্যে সেই কোম্পানির উদ্যোক্তারা তাদের শেয়ার বিক্রি করতে পারে না।
রানার অটোমোবাইলস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ২০১৯ সালে। সে হিসেবে ২০২২ সালের আগে ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স তাদের হাতে থাকা রানারের শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না।
সেই নিয়ম তারা এখন শিথিল করার আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে রানার অটোমোবাইলসের পরিচালক মোয়াল্লেম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই তিন বছর সময়ের বাধ্যবাধকতা কমানোর আবেদন করা হয়েছে। তার মানে এই নয় যে রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের শেয়ার বিক্রি করতে চেয়েছে ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স।
“বাংলাদেশে লক ইন পিরিয়ড যে তিন বছর, সেটা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। ব্রামার এটা কমানোর আবেদন করেছে।”
রানার অটোমোবাইলসের শেয়ার ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স বিক্রি করে দিচ্ছে বলে যে খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তা ‘সঠিক নয়’ বলেও দাবি করেন মোয়াল্লেম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নিয়মে শেয়ার বিক্রি করতে গেলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি দরকার হয় না। নিয়ম হচ্ছে আমি যদি তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে চাই, আমাকে স্টক এক্সচেঞ্জে জানাতে হবে। শুধু যদি আমি বাজার মূল্যের ১০ শতাংশের কম বা বেশি দামে বিক্রি করতে চাই, তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি দরকার হয়। আমরা শেয়ার বিক্রি করার অনুমতির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে যাইনি।”
তবে রানারের শেয়ার বিক্রি করার পরিকল্পনা যে ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্সের আছে, মোয়াল্লেম চৌধুরীর কথায় তা স্পষ্ট।
“যারা কোনো কোম্পানির উদ্যেক্তা, তারাতো সব সময় কোম্পানির মালিকানায় থাকে। মালিক মারা গেলে তার ছেলে চেয়ারম্যান হয়। এভাবে চলতে থাকে যত বছর পর্যন্ত কোম্পানিটা থাকে।
“কিন্তু আমাদের মত যারা প্রাইভেট ইক্যুইটি নিয়ে আসে, তারা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসে। এক সময় তারা শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যায়, এটা কোনো সারপ্রাইজ না।”
২০০০ সালে বাংলাদেশে কাজ শুরু করে রানার অটোমোবাইলস। ১৩ বছর পর, অর্থাৎ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে এ কোম্পানির ১ কোটি ৩৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৬১টি শেয়ার কিনে নেয় ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স।
সে সময় প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৭৭ টাকা ৯২ পয়সা। ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স এর মোট বিনিয়োগ ছিল ১০৫ কোটি ২ লাখ টাকার মত।
এরপর ২০১৯ সালের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় রানার। এখন এ কোম্পানির ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫৬ হাজার ৫২১টি শেয়ার ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্সের হাতে আছে, যা মোট শেয়ারের ২৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
বুধবার রানারের শেয়ার পুঁজিবাজারে ৬৩ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছিল। সে হিসেবে ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্সের হাতে থাকা শেয়ারের দাম হয় ২৮৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।
মোয়াল্লেম চৌধুরী বলেন, ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স যে টাকা রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডে বিনিয়োগ করেছে, সেটাকে বলে ‘গ্রোথ ফান্ড’।
“এই গ্রোথ ফান্ড সাধারাণত দেওয়া হয় যখন একটি কোম্পানির ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকে। এ ধরনের ফান্ড একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) মহাসচিব রিয়াদ মতিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পৃথিবীতে সব দেশেই এটা হয়। অনেক পরিচালক আছেন যারা কোম্পানির গঠনের সময় শেয়ার কেনেন। একসময় সম্পদ যখন বৃদ্ধি পায় তখন তারা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বের হয়ে যান। ব্যবসার সূত্র কিন্তু তাই বলে, যখন আমার বিনিয়োগ সর্বোচ্চ লাভে আসবে, আমি সেই মুনাফা নিয়ে নেব।”,
তার বিবেচনায়, রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডে একটি চলমান কোম্পানি এবং তাদের সামনে ভালো করার যায়গা আছে। সেখানে একজন অংশীদার কিছু শেয়ার বিক্রি করে দিলেও ‘বড় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়’।
রানারের শেয়ার বর্তমানে পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে। ২০২০ অর্থবছরে ২২ কোটি ৪১ লাখ টাকা মুনাফা করে বিনিয়োগকারীদের প্রতি শেয়ারে ১ টাকা পয়সা লভ্যাংশ দেয় এ কোম্পানি।
পুঁজিবাজারে রানারের ১১ কোটি ৩৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩৩টি শেয়ার আছে। এর মধ্যে ৫০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার আছে।
ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স বাংলাদেশে রানার ছাড়াও আরো সাতটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে, যার মধ্যে আছে সুপার শপ আগোরা এবং পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।