৫০০ কোটি টাকার জিরো কুপন বন্ড ছাড়তে চায় নগদ

জিরো কুপন বন্ড ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ৫০০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি নগদ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2021, 10:37 AM
Updated : 27 July 2021, 10:42 AM

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আয়োজিত বিনিয়োগ মেলায় সোমবার এ ঘোষণা দেওয়া হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এতে বলা হয়, অনুমোদন পেলে দেশের কোনো ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানির প্রথম বন্ড হবে এটি। পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে যার অভিহিত মূল্য বেড়ে ৭৫০ কোটি টাকা হবে।

এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে বিদেশিদের কাছ থেকে ‘ব্যাপক সাড়া’ পাওয়া যাচ্ছে দাবি করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এর মধ্যে কিউ গ্লোবাল নামে যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল কোম্পানি ৩ কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।

বন্ডটির অ্যারেঞ্জার হিসেবে রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেড ও ট্রাস্টি হিসেবে গ্রিন ডেল্টা ক্যাপিটাল লিমিটেড দায়িত্ব পালন করছে।

সরকারি বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান তহবিল সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে বন্ড ছাড়ে। অর্থাৎ এই বন্ডের মাধ্যমে তারা যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা ধার করে।  

বিনিময়ে কোনো বন্ডে মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পর পর সুদ দেওয়া হয়, যেগুলোকে নিয়মিত বন্ড বলা হয়। আর কোনোটিতে সুদ দেওয়া হয় না। কিন্তু অভিহিত মূল্যের চেয়ে ছাড় দিয়ে বিক্রি করা হয় এবং মেয়াদ শেষে পুরো অভিহিত মূল্য ফেরত দেওয়া হয়। এগুলোকে জিরো কুপন বন্ড বলা হয়।

নগদের কথাই ধরা যাক, এখন ৫০০ কোটি টাকাকে ভাগ করে যতগুলো বন্ড বিনিয়োগকারীরা কিনবে, তার বিনিময়ে পাঁচ বছর তারা মোট ৭৫০ কোটি টাকা ফেরত পাবে।

ধরে নিলাম প্রতিটি বন্ডের অভিহিত মূল্য হবে দেড় কোটি টাকা। নগদ এখন ৫০ লাখ টাকা ছাড় দিয়ে বন্ডপ্রতি এককোটি টাকা ধার নেবে। কিন্তু পাঁচ বছর প্রতি বন্ডের জন্য দেড় কোটি টাকা করে ফেরত দেবে। সাধারণ নিয়মে সুদ না থাকলেও এই ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগকারীর মুনাফা।

বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ প্রয়োজনীয় ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ, নেটওয়ার্ক তৈরি, কার্যকরী প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা, আইটি সরঞ্জাম সংগ্রহ, বিপণন ও প্রচারের কাজে খরচ করবে নগদ।

বিএসইসি বন্ড ছাড়ার বিষয়ে ‘প্রাথমিক অনুমোদন’ দিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে নগদ।

অনুষ্ঠানে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বন্ডের বাজারও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।

“নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা বন্ডকে আরো একটি উৎস হিসেবে বিবেচনা করছি। তাছাড়া ‘নগদ’ সবসময়ই উদ্ভাবনী কোম্পানি হিসেবে অগ্রযাত্রা ধরে রেখেছে এবং সে কারণেই আমরা প্রথাগত অর্থায়নের চেয়ে বন্ডের বাজারকে বেশি পছন্দ করছি।”

বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের পুঁজিবাজার, বিশেষত ঋণ বাজারের উন্নয়নে কাজ করছে বিএসইসি, যা আমাদের শিল্প ও অবকাঠামোর দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজনে অর্থায়নের জন্য অত্যাবশ্যক। আশা করি ‘নগদ’-এর বন্ড বাজারে আসা আমাদের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি, রাষ্ট্র মালিকানাধীন সংস্থা এবং অন্যান্য কোম্পানিকে উৎসাহিত করবে।”

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি, অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, নগদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. কামাল, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারমান মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, কিউ গ্লোবাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভেন ল্যান্ডম্যানসহ বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরতে বিএসইসি বিনিয়োগ বিষয়ক এই রোডশোর আয়োজন করেছে, যেখানে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি ছাড়াও প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীরা অংশ নিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহর নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, লস অ্যাঞ্জেলেস (ক্যালিফোর্নিয়া) এবং সিলিকন ভ্যালিতে (স্যান্টা ক্লারা) ২ আগস্ট পর্যন্ত চারটি রোডশো অনুষ্ঠিত হবে।