ডিএসইতে ৬ হাজার পয়েন্টের মাইলফলকে ‘মনস্তাত্বিক লড়াই’

দীর্ঘদিন পর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ছয় হাজার পয়েন্টের মাইলফলকে পৌঁছানোর পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যেন ফিরে এসেছে ‘মনস্তাত্ত্বিক ভীতি’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2021, 12:05 PM
Updated : 1 June 2021, 12:07 PM

এই টানাপড়েনের প্রভাব দেখা গেছে সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবারের লেনদেনও।

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে এখন একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয় কাজ করছে। গত সোয়া তিন বছর ডিএসই সূচক ৬ হাজার পার করে নাই। এর আগে ৬ হাজারের কাছাকাছি এসে কারেকশন হয়েছে।

“এর ফলে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন ৬ হাজার হচ্ছে বর্তমান সূচকের একটা সর্বোচ্চ সীমা। এই কারনে সূচক ৬ হাজারে উঠলে বিক্রির চাপ আসতেছে।“

গত দুই দিনে এমন কয়েক দফায় আসা বিক্রির চাপের সময় ক্রেতাও পাচ্ছে বাজার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চাপটা আবার পুঁজিবাজার নিয়ে ফেলছে। এই বিক্রির চাপটা নিয়ে পুঁজিবাজার যদি টিকে থাকতে পারে। অন্য সব ফান্ডামেন্টাল দিক যদি ঠিক থাকে, তাহলে সামনে সূচক এই মাইলফলক ছাড়িয়ে যাবে।”

মঙ্গলবারের লেনদেন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দিনের লেনদেনের শুরুর প্রথম কয়েক মিনিটেই আবার ছয় হাজার পয়েন্টের মাইলফলক পেরিয়ে যায় ডিএসইএক্স সূচক।

এরপর বেশিরভাগ সময় ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও শেয়ার বিক্রির অব্যাহত চাপে লেনদেন চলাকালে কয়েক দফাতেই তা ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নামে।

আবার কিছুক্ষণ পর অনেক শেয়ার হারানো দর ফিরে পেলে এই অবস্থানের ওপরে ওঠে। দিনের একেবারে শেষভাগের বিক্রির চাপে শেষ পর্যন্ত সূচকটি মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের এই বাধা টপকাতে পারেনি।

মঙ্গলবার দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিন থেকে ২ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বাড়লেও তার অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৯৯৩ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে।

রোববার সাড়ে ৩৯ মাস পর ডিএসইএক্স সূচক ছয় হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করেছিল। পরদিন সোমবার দিনভর ওঠানামার পর আবার এই সীমার নিচে নেমে গিয়েছিল।

পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, “এই মুহূর্তে দেশের পুঁজিবাজার খুব ভালো অবস্থায় আছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা আছে।”

এদিন ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে ৩৬৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৯টির ও কমেছে ১৫৪টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩টির দর।

ব্যাংক খাতের ৭৭ শতাংশ শেয়ারের দাম কমেছে। তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে ২৪টির শেয়ারের দাম কমেছে।

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ৬৫ শতাংশ শেয়ারের দাম কমেছে। এই খাতে তালিকাভুক্ত ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ১৫টির শেয়ারের দাম কমেছে ।

এদিন বীমা খাতে মাত্র ৯৪ শতাংশ শেয়ারের দাম বেড়েছে। ৫০টি বীমা কোম্পানির মধ্যে ৪৭টির শেয়ারের দাম বেড়েছে।

বস্ত্র খাতের ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে ২৮টির শেয়ারের দাম বেড়েছে।

বেশিরভাগ শেয়ার দর হারালেও ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বা ১৬৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা বেড়েছে।

মঙ্গলবার ডিএসইতে ১ হাজার ৯০৩ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের কর্মদিবসে ১ হাজার ৭৩৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ছিল।

ঢাকার অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৮৪ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্টে।

ডিএস৩০ সূচক ১২ দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ১৯৩ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে।

ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ ১০টি কোম্পানি

বেক্সিমকো লিঃ, এনআরবিসি ব্যাংক, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, ইফাদ অটোস,  নর্দান ইসলামি ইন্স্যুরেন্স, বিডি ফাইন্যান্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফিড মিল ও এবি ব্যাংক।

দাম বাড়ার শীর্ষ ১০টি কোম্পানি

প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, আল-হাজ্ব টেক্সটাইল ও আমান কটন।

দাম কমার শীর্ষ ১০টি কোম্পানি

এমবিএল ১ম মিঃ ফাঃ, এআইবিএল ১ম ইসলামি মিঃ ফাঃ, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার লিজিং, জিএসপি ফাইন্যান্স, ফু-ওয়াং সিরামিক, ইউসিবিএল, তৌফিকা ফুডস ও আফতাব অটোমোবাইল।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৬ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৭ হাজার ৩৭৫ দশমিক ৯৬ পয়েন্টে।

সিএসইতে এদিন লেনদেন ৫৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ৩৩ কোটি ৪৪ লাখ বেড়েছে। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৯২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৫৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৯৮টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩০টির, কমেছে ১২৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৯টির দর।