‘ষড়যন্ত্র করে জীবন দুর্বিষহ’ করে তোলা হয়েছিল, বললেন এলআর গ্লোবালের সিইও

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের অন্যতম শীর্ষ একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসির) সাবেক ‘দুয়েকজন’ কমিশনার ‘নানা ধরনের ষড়যন্ত্র’ করেছিলেন তাদের কোম্পানির বিরুদ্ধে।

জেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2021, 01:25 PM
Updated : 8 May 2021, 01:26 PM

এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের সিইও রিয়াজ ইসলাম শনিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের’ মধ্য দিয়ে তাদের ‘দুর্বিষহ’ অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাবেক সেই কর্মকর্তারা।

“আমাদের যে ড্যামেজ করার চেষ্টা হয়েছিল, বাজারে এটার প্রভাব পড়েছিল বিশাল। বাজারের সবচেয়ে সফল ও পেশাদার কোম্পানিকে নিয়ে যারা এই ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে, তারা শুধু নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এটা করেছে এবং এ কারণে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আসা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।“     

ঢাকার অ্যামচেম কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি এবং এলআর গ্লোবালের সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরতে গিয়ে এসব অভিযোগের কথা সামনে আনেন রিয়াজ ইসলাম।

তিনি বলেন, “আমি আপনাদের আমার একটা কষ্টের কথা বলি। ২০১৫ থেকে কমপক্ষে একজন বা দুইজন বিএসইসি কমিশনার আমাদের লাইফ হেল করে দিয়েছিল। হেল করেছিল ৯৫ থেকে ৯৯ শতাংশ বানানো অভিযোগ (ক্লেইম) দিয়ে।

“ওই সময় আমাদের অনেক বাধা দেওয়া হয়েছে। আমরা ২০১০ সালে বাজারে আসি। ২০১৫ পর্যন্ত আমরা অনেক উন্নতি করেছি।”

তারপর ‘বাধার কারণে’  এলআর গ্লোবালের বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা থমকে গিয়েছি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২১ সালের শুরুতে এসে এর সমাধান তারা পেয়েছে।

“কিন্তু কমিশনের ওই কর্মকর্তাদের কাণ্ড অনেক ডিফিকাল্ট ও পেইনফুল হয়েছে আমার জন্য, আমার টিমের জন্য।”

রিয়াজ ইসলামের অভিযোগ, সাবেক ওই কমিশনররা সে সময় ‘মিথ্যা অভিযোগ’ তোলার পাশাপাশি ‘বানোয়াট সংবাদ’ও পরিবেশন করিয়েছেন।

“বাজারের শীর্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির বিরুদ্ধে এ আচরণের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং এতে ক্ষতির শিকার হয়েছে পুঁজিবাজার।”

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পূর্ণ সহযোগিতা করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এলআর গ্লোবাল

এলআর গ্লোবালের বিরুদ্ধে যেসব ‘ভুয়া সংবাদ ছড়ানো হয়েছে’ সেগুলো বিএসইসির বিধি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরও লঙ্ঘন বলে দাবি করেন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী।

তিনি যে সময়ের কথা বলছেন, তখন দায়িত্বে ছিল অধ্যাপক খায়রুল হোসেন নেতৃত্বাধীন কমিশন।

২০২০ সালের ১৪ মে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব শেষ করে পুরনো কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান অধ্যাপক খায়রুল। তার দিন দশেক আগে কমিশন থেকে বিদায় নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী। তিনিসহ আরও কয়েকজন কমিশনার দায়িত্ব পালন করেন ওই কমিশনে।

ওই কমিশনের কোন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এলআর গ্লোবাল অভিযোগ করছে, সেই প্রশ্নের উত্তর সংবাদ সম্মেলনে দেননি রিয়াজ ইসলাম।

আগের কমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে ২০২০ সালের মে মাসে বিএসইসি পুনর্গঠিত হয়।

নতুন কমিশনের প্রশংসা করে রিয়াজ ইসলাম বলেন, “আমরা খুবই এক্সাইটেড যে নতুন কমিশন এসে আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছে। আমরা উনাদের সঙ্গে কাজ করেছি। ওইগুলো এখন অতীত।

“যে সমস্যাগুলো হয়েছে, ফাইনালি মনে হয় উনারা এটাকে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করছেন।” 

২০১৯ সালের অক্টোবরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এলআর গ্লোবাল। ওই বিনিয়োগ নিয়েও সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন।

ওই সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল- “২০১৯ সালে আপনারা দেশের একটি অনলাইনে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। বিএসইসি থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, আপনারা সেখান থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে আসবেন। এ বিষয়ে আপনারা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না?”

উত্তরে রিয়াজ ইসলাম বলেন, “আমরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে কাজ করছি। শুরুতেই একটা বিষয় আমরা স্পষ্ট করতে চাই। আমরা যে বিনিয়োগ করেছি, এটা অ্যাবসোলিউটলি লিগ্যাল, এটার মধ্যে এ বি সি- কোনো একসেপশন নাই।

“দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, আগে (আগের কমিশনের সঙ্গে) একটা বিরূপ সম্পর্ক ছিল, কনস্ট্রাকটিভ না। আমাদেরতো কাজই বিনিয়োগ করা। আমরা ভুল করতেও পারি, তাই না? কিন্তু একটা গঠনমূলক ওয়েতে এটা সমাধান করতে চাই।

তিনি বলেন, “এখন আমরা বিএসইসির সঙ্গে কাজ করছি। উনারা যেভাবে বলবে, আমরা সেভাবে একটা উইন উইন সিচুয়েশন করে সলভ করব।”

এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলাম, বিনিয়োগ ও আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে যার কাজের অভিজ্ঞতা ৩০ বছরের বেশি

কোম্পানির সফলতা

নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক একটি কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশে পরিচালনা করছে ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ড। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, গ্রিন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ এবং এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-১।

আগামীতে আরো ফান্ড আনার ইচ্ছার কথা সংবাদ সম্মেলনে জানান কোম্পানির প্রধান নির্বাহী।

গত চার বছরে বাংলাদেশের সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে এলআর গ্লোবাল মুনাফার দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বলেও দাবি করেন রিয়াজ ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে এলআর গ্লোবালের ফান্ডগুলো যথাক্রমে ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ, ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১৯ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং ৪০ দশমিক ১০ শতাংশ ক্রমসঞ্চিত মুনাফা ‍দিতে পেরেছে।

বাংলাদেশের আর কোনো সম্পদ ব্যবস্থাপকের পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ড তা দিতে পারেনি বলে দাবি করেন ওয়াল স্ট্রিটে কাজ করে আসা রিয়াজ।

তিনি বলেন, “এলআর গ্লোবাল পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ডগুলো যে শুধু ভালো মুনাফা দিয়েছে তা নয়, এখানে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিও কম।”

ফান্ডগুলো কোথায় কত বিনিয়োগ করেছে, তার একটি তালিকা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে এলআর গ্লোবাল পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ঝুঁকি ‘সবচয়ে কম ছিল’।

তাদের হাতে থাকা ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১০ সালে। এ পর্যন্ত তারা মোট ৬৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে, যা তহবিলের আকারের ৫৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।

গ্রিন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত হয় ২০১০ সালে। এ পর্যন্ত ৪৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে এ ফান্ডে, যা মোট তহবিলের ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ।

২০১১ সালে তালিকাভুক্ত এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড থেকে এ পর্যন্ত লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে ৫৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা তহবিলের আকারের ৫৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ২০১১ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে, যা মোট ফান্ডের আকারের ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচুয়াল ফান্ড-১ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১১ সালে। ফান্ডটি থেকে ১২৫ কোটি ৩ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে, যা মোট ফান্ডের আকারের ৪১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

আর এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-১ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১২ সালে। মোট ৫১ কোটি ২৭ লাখ টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে এই ফান্ড, যা মোট তহবিলের ৫১ দশমিক ২৭ শতাংশ।