বিদেশিরাও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা হতে পারবেন

দেশের পুঁজিবাজারে আরো বিদেশি বিনিয়োগ টানতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2021, 01:22 PM
Updated : 3 May 2021, 02:39 PM

সোমবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিদেশি সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে মিউচ্যুয়াল ফান্ড গঠনে উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছে।

নিয়মিত কমিশন সভায় সোমবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সোমবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই বিষয়ে নির্দেশনাও প্রকাশ করেছে।

জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বিদেশি তহবিল ব্যবস্থাপকের দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরেন।

এসব বিনিয়োগ এলে বাজার আরও বড় ও স্থিতিশীল হবে আশা প্রকাশ করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কিছুদিন আগে দেশের বাইরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ে রোড শো করার পরে ফান্ড ব্যবস্থাপকরা আসতে চাচ্ছিলেন। সেখানে কিছু আইনগত সমস্যা ছিল। এই অনুমোদনের মাধ্যমে সেটা আমরা ঠিক করে দিলাম। এখান থেকে বড় ফান্ড আশা করছি।

“মিউচ্যুয়াল ফান্ড পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে। এই ফান্ডগুলো আসলে পুঁজিবাজার আরো বড় হবে, স্থিতিশীলতা বাড়বে। বর্তমানে বিদেশিদের জন্য ২৫ শতাংশ সাবস্ক্রাইবের সুযোগ রেখেছি। পরে তারা ভাল করলে এই সুযোগ আরো বাড়িয়ে দেওয়া হবে।”

বিদেশিদের মিউচ্যুয়াল ফান্ডে উদ্যোক্তা হওয়া বিষয়ক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে বিদেশি কোম্পানি মিউচ্যুয়াল ফান্ড গঠন করতে উদ্যোক্তা বা স্পন্সর হতে পারবে। ওই বিদেশি কোম্পানি সরকারি বা বেসরকারি হতে পারবে।

বিদেশি কোম্পানি এককভাবে কিংবা যৌথভাবে দেশি যোগ্য কোনো কোম্পানির সঙ্গে মিলে উদ্যোক্তা হিসেবে মিউচ্যুয়াল ফান্ড গঠন করতে পারবে।

এই সংক্রান্ত নির্দেশনায় কিছু শর্তও ঠিক করে দিয়েছে বিএসইসি।

এ জন্য বিদেশি কোম্পানিকে একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। এরপর একক বা যৌথভাবে মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা হতে হবে তারা।

কমিশনের অন্য শর্তের মধ্যে রয়েছে, বিদেশি কোম্পানি কোনোভাবেই পুরো ফান্ডের ২৫ শতাংশের বেশি মালিক হতে পারবে না বা ‘সাবস্ক্রাইব’ করতে পারবে না।

এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরাও।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদেশি ফান্ড ম্যানেজার আসলে বাজারের জন্য ভালো হবে।”

সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারের পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট বাড়তে পারে।”

মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এতে পুঁজিবাজারে বিদেশি টাকা আসার পথ সুগম হল।”

মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে থাকে। বিনিয়োগ থেকে পাওয়া মুনাফা ইউনিটহোল্ডারদের মাঝে লভ্যাংশ হিসেবে দেয়।

এখন পর্যন্ত দেশে সাধারণত এমন ফান্ডের উদ্যোগ নেয় সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। ফান্ডগুলোর ব্যবস্থাপনায় থাকে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান।

ফান্ড গঠনের শুরুতে উদ্যোক্তারা কিছু মূলধন যোগান দেন। বাকি টাকা পুঁজিবাজার থেকে তোলা হয়।

বেমেয়াদি (ওপেন এন্ড) মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের আইপিও প্রক্রিয়ার বাইরেও ইউনিট বিক্রির মাধ্যমে টাকা তোলা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা বা স্পন্সর দেশি কোম্পানি। এর বাইরেও বেমেয়াদি ফান্ড রয়েছেভ

নতুন এই বিধানের ফলে বিদেশি কোম্পানির মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা হওয়ার পথ তৈরি হলো।