বিপুল অংকের দাবিহীন লভ্যাংশ পড়ে আছে কোম্পানিতে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো প্রতি বছর বিনিয়োগকারীদের যে লভ্যাংশ দেয়, তার অবণ্টিত ও দাবিহীন হাজার হাজার কোটি টাকার সন্ধানে নেমেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

রিয়াজুল বাশারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2020, 04:16 AM
Updated : 26 Nov 2020, 09:07 AM

হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত হওয়ার পর অবণ্টিত ও দাবিহীন ওই অর্থ বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের সুরক্ষায় কীভাবে কাজে লাগানো, যায়, সেই পরিকল্পনাও করছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তা-ব্যক্তিরা।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোযেন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অবণ্টিত ও দাবিহীন লভ্যাংশের (নগদ ও স্টক) পরিমাণ কত, আমরা সেটা বিভিন্ন উৎস থেকে জানার চেষ্টা করছি।”

এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিএসইসি থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ৪০০ নিবন্ধিত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তথ্য চাওয়া হয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কাছেও। 

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) থেকে প্রাথমিক যে তথ্য বিএসইসি পেয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার নগদ ও স্টক লভ্যাংশ অবণ্টিত ও দাবিহীন অবস্থায় কোম্পানিগুলোর কাছে রয়ে গেছে। এর মধ্যে তিন হাজার কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ, বাকিটা স্টক লভ্যাংশ।

ওই কর্মকর্তা বলেন, সিডিবিএল চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য দিয়েছে। হালনাগাদে তাতে হেরফের হতে পারে।

“চারশ কোম্পানির মধ্যে আড়াইশর হিসাব এসেছে। সব কোম্পানি ও স্টক এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে তথ্য আসার পর চূড়ান্ত হিসাব হবে। সব উৎসের তথ্য সমন্বয় করলে দেখা যাবে, অবণ্টিত ও দাবিহীন টাকার অংকটা যথেষ্টই বড়।”

অবণ্টিত ও দাবিহীন লভ্যাংশ কী?

কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণার পর তা তাদের ডিভিডেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে বিনিয়োগকারীদের নামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নগদ লভ্যাংশ সরাসরি বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। আর স্টক লভ্যাংশ জমা হয় তাদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টে।

যাদের নামে শেয়ার, তারা কেউ মারা গেলে, বিদেশে চলে গেলে, কিংবা দীর্ঘদিন খোঁজ না রাখলে তাদের ব্যাংক হিসাব বন্ধ বা অকার্যকর হয়ে যায়। বিও হিসাবের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে।

এ ধরনের ক্ষেত্রে লভ্যাংশের টাকা বা শেয়ার বিনিয়োগকারীর ব্যাংক বা বিও অ্যাকাউন্টে জমা না হয়ে কোম্পানির কাছে ফেরত যায়। বিনিয়োগকারীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে অনেক সময় তার মনোনীত উত্তরাধিকারী সেই টাকা আর দাবি করেন না তথ্য বা কাগজপত্রের অভাবে।

এর বাইরেও আইনি জটিলতা বা অন্য কারণে লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীর হাতে পৌঁছয় না অনেক সময়। তখন কোম্পানি ওইসব লভ্যাংশ ‘সাসপেন্ডেড’ হিসাবে জমা দেখিয়ে চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণী তৈরি করে।

সিডিবিএল হিসাবে থাকা ওইরকম ৩৩১৫টি সাসপেন্ডেড হিসাবেই প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার অবণ্টিত ও দাবিহীন লভ্যাংশের তথ্য মিলেছে।

কী করতে চায় বিএসইসি

নিয়ন্ত্রক সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তালিকাভুক্ত সিংহভাগ কোম্পানির কাছেই এরকম অবণ্টিত ও দাবিহীন লভ্যাংশ রয়ে গেছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর মধ্যে কিছু লভ্যাংশের বিষয়ে দাবি উঠতে পারে, তার মধ্যে কিছু নিস্পত্তিও হয়ে যেতে পারে।

“আমরা প্রথমে হিসাবটা করতে চাচ্ছি যে, কত লভ্যাংশ অবণ্টিত ও দাবিহীন অবস্থায় আছে। কোনো দাবিদার না থাকলে হিসাব চূড়ান্ত করার পর ওই অর্থ বিনিয়োগকারী ও বাজারের সুরক্ষার কাজে লাগানোর চিন্তা-ভাবনা আমাদের রয়েছে।”

বছরের পর বছর ধরে অবণ্টিত ও দাবিহীন এসব লভ্যাংশ কোম্পানিগুলোর কাছে পড়ে থাকলেও এতদিন এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

গত মে মাসে চেয়ারম্যান, কমিশনারসহ বিএসইসির শীর্ষ পদে পরিবর্তন আসার পর বাজার স্থিতিশীল করতে নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে বিএসইসির ওই কর্মকর্তা বলেন, “সেখানে অবণ্টিত ও দাবিহীন লভ্যাংশ সাত বছর পর্যন্ত সাসপেন্ডেড থাকতে পারে। এরপর সেটা চলে যায় বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিলে। কিন্তু আমাদের এখানে ওই ধরনের কোনো তহবিল বা নীতিমালা নেই। আমরা এবার সেরকম কিছু করার কথা ভাবছি।”