ওয়ালটনের শেয়ারদর ২৩ দিনে কমেছে ২২৮ টাকা

পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভুক্ত দেশীয় প্রযুক্তি কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম গত ২৩ দিনে ২২৮ টাকা কমে গেছে।

ফারহান ফেরদৌস নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2020, 12:41 PM
Updated : 10 Nov 2020, 03:15 PM

সোমবার ওয়ালটনের শেয়ারের সমাপনী মূল্য ছিল ৭৭৪ টাকা ৯০ পয়সা। এর আগে ৬ অক্টোবর ওয়ালটনের শেয়ারের সমাপনী মূল্য ছিল ১ হাজার ২ টাকা ৭০ পয়সা।

চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে লেনদেনে আসে ওয়ালটনের শেয়ার। শেয়ারটি বিনিয়োগকারীরা ২৫২ টাকায় পেয়েছিল।

তারপর টানা বেড়ে ৬ অক্টোবর ওয়ালটনের শেয়ারের সমাপনী মূল্য দাঁড়িয়েছিল ১ হাজার ২ টাকা ৭০ পয়সায়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯ টাকায়ও লেনদেন হয়েছিল।

এরপর থেকেই ওয়ালটনের শেয়ারের দাম কমতে থাকে। ২৩ দিনে দাম কমেছে ২২৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ।

ওয়ালটনের শেয়ারের জোগান কম থাকায়ই এর দর বাড়িয়ে দিয়েছিল বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুঁজিবাজারে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার এসেছে এক শতাংশের কম। শেয়ারের জোগান ছিল কম। আর এই শেয়ারের চাহিদা ছিল বেশি। এ কারণেই এই কোম্পানির শেয়ারের দাম দ্রুত বেড়েছে।”

তবে কোনো কোম্পানি যদি পুঁজিবাজারে আসতে চায়, তাহলে তার কম করে হলেও ৫ শতাংশ শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার নিয়ম করার পক্ষে মত দেন তিনি।

ওয়ালটনের ১ শতাংশেরও কম শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়া হয়েছে, ৯৯ শতাংশের বেশি শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতে রয়ে গেছে। অথচ পুঁজিবাজারের শীর্ষ মূলধনী কোম্পানি গ্রামীণফোনের ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে আছে।

ওয়ালটন এত কম শেয়ার ছেড়ে কীভাবে পুঁজিবাজারে আসার অনুমোদন পেল, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও।  

এর জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পূর্বসূরিদের দায় দেন।

তিনি বলেন, “ওয়ালটনের বিডিংসহ সব কিছু শেষ হয়ে গিয়েছিল আমরা যোগদান করার আগেই। আমাদের যতটুকু করণীয় ছিল ততটুকু আমরা করতে পেরেছি, আমরা ২০ শতাংশ কম দামে এই শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য দিয়েছি।

“আরেকটু সময় পলে ব্যাপারটা আমরা আরেকটু ভালো করে দেখে করতে পারতাম। তবে আমরা এখন খেয়াল করছি, যাতে এ রকম কিছু আর ভবিষ্যতে না হয়।”

রেকর্ড শেয়ারপ্রতি মুনাফা নিয়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ওয়ালটন। বাজার মূলধনের ভিত্তিতে তারা পুঁজিবাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি।

তালিকাভুক্তির আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তাদের শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ৪৫ টাকা ৪৩ পয়সা। 

কিন্তু গত ২৫ অক্টোবর ২০১৯-২০ অর্থবছরের যে মুনাফা তারা ঘোষণা করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে তাদের শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়ে গেছে অর্ধেক। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তাদের শেয়ার প্রতি মুনাফা ২৪ টাকা ২১ পয়সা।

পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় কোম্পানি গ্রামীণফোনের বাজার মূলধন ৪৫ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। তার পরে থাকা ওয়ালটনের বাজার মূলধন ২৩ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা।

সোমবার গ্রামীণফোনের শেয়ারের সমাপনী মূল্য ছিল ৩৩৪ টাকা ৮০ পয়সা।

সর্বশেষ নিরীক্ষিত হিসাবে গ্রামীণফোনের শেয়ার প্রতি মুনাফা ২৫ টাকা ৫৬ পয়সা। ওয়ালটনের শেয়ার প্রতি মুনাফা ২৪ টাকা ২১ পয়সা। তৃতীয় বড় কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার প্রতি মুনাফা ১৫ টাকা ৮২ পয়সা।  

সর্ব শেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণফোনের পিই রেশিও ১২ দশমিক ৬২, ওয়ালটনের পিই রেশিও ৩২ দশমিক ০১ এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের পিই রেশিও ১২ দশমিক ৭৯।

যে সব শেয়ারের পিই রেশিও ১৫ এর কম, সেগুলো পুঁজিবাজারে তুলনামূলক কম দামে লেনদেন হচ্ছে, আর যেসব শেয়ারের পিই রেশিও ১৮ এর উপরে সেগুলোর দাম বেশি।

গ্রামীণফোন গত তিন অর্থবছরে যে মুনাফা করেছে, তার গড় করলে হয় ৩ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। ওয়ালটনের তিন অর্থবছরের মুনাফার গড় ৮২০ কোটি টাকা। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের তিন অর্থবছরের মুনাফার গড় ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা।    

গ্রামীণফোনের শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ২৮ টাকা ৪০ পয়সা, ওয়ালটনের শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ১৫৯ টাকা ৯৪ পয়সা এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ৯১ টাকা ৫৭ পয়সা।

২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওয়ালটনের শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ‘এন’ ক্যাটাগরিতে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওয়ালটন মুনাফা করেছিল ১ হাজার ৩৭৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মুনাফা কমে হয় ৭৩৩ কোটি টাকা।

পুঁজিবাজারে এ কোম্পানির ৩০ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি শেয়ার আছে। এর মধ্যে ৯৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে।

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বর্তমান বাজার মূলধন ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা; রিজার্ভের পরিমাণ ৬ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা।

ওয়ালটনের মালিকানায় যারা

ওয়ালটনের উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে আছেন এস এম নুরুল আলম রিজভী, এস এম শামসুল আলম, এস এম আশরাফুল আলম, এস এম মাহবুবুল আলম, এস এম রেজাউল আলম এবং আরবি গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেড।

নুরুল আলম রিজভী হচ্ছেন কোম্পানির চেয়ারম্যান। শামসুল আলম ভাইস চেয়ারম্যান, আশরাফুল আলম ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আইপিওতে আসার আগে নুরুল আলম রিজভী ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ১১ শতাংশের মালিক। শামসুল আলম ২০ শতাংশ, আশরাফুল আলম ২২ শতাংশ, মাহবুবুল আলম ১৮ শতাংশ এবং রেজাউল আলম ১৩ শতাংশের মালিক।

ওয়ালটনের পণ্য

ওয়ালটনের তৈরি পণ্যের মধ্যে আছে রেফ্রিজেরেটর, ফ্রিজার, এয়ার কন্ডিশনার, কম্প্রেসার, টেলিভিশন, এলইডি বাল্ব, সুইচ সকেট, সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান, ব্লেন্ডার, গ্যাস স্টোভ, কুকার, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি।

সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানির ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৮৮ শতাংশ আয় হয় ফ্রিজ বিক্রি করে, এয়ার কন্ডিশনার থেকে আসে সাড়ে চার শতাংশ আয়, টেলিভিশন বিক্রি করে আসে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ, ব্লেন্ডার, গ্যাস স্টোভ, কুকার ওয়াশিং মেশিন থেকে আসে ১ দশমিক ১০ শতাংশের মতো এবং এলইডি বাল্ব, সুইচ সকেট, সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান ইত্যাদি থেকে আসে দশমিক ৩০ শতাংশের মতো।