পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে কম সুদে ঋণ পাবে ব্যাংকগুলো

ব্যাংকগুলোকে কম সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার সুযোগ দিতে রেপোর (পুনঃক্রয় চুক্তি) সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে আনা হয়েছে।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2020, 02:13 PM
Updated : 24 Sept 2020, 02:13 PM

বৃহস্পতিবার এক সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এ ক্ষেত্রে রেপোর সুদ হার হবে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা আগে ৫ শতাংশ ছিল।

পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত সীমার বাইরেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার ‘বিশেষ তহবিল’ গঠনের সুযোগ দিয়েছিল সরকার।

আর এ জন্য ব্যাংকগুলোর টাকার প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোর মাধ্যমে ঋণ নিয়ে তহবিল গঠন করতে বলা হয়েছিল।

ব্যাংকগুলো যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলো এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য তহবিল তৈরি করতে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে।

ফাইল ছবি

গত ১০ ফেব্রুয়ারি ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশেষ তহবিল গঠন এবং বিনিয়োগের নীতিমালা’ শীর্ষক সার্কুলারে বলা হয়েছিল, ব্যাংকগুলো নিজস্ব অর্থে এই তহবিল গঠন করতে পারবে। তা না পারলে ট্রেজারি বিল/ট্রেজারি বন্ড রেপোর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তহবিল গঠন করতে পারবে।

ইচ্ছে করলে প্রথমে নিজেদের অর্থে তহবিল গঠন করে পরে ট্রেজারি বিল/ট্রেজারি বন্ড রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওই পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা যাবে।

এ সুবিধা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে জানিয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছিল, প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট ব্যাংক ও ডিলার লাইসেন্সধারী ব্রোকারেজ হাউজ) এবং অন্যান্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ (ডিলার) ‘শুধুমাত্র পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের’ জন্য সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকার এই তহবিল গঠন করতে পারবে।

>> ব্যাংকগুলো ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে যে কোনো কার্যদিবসে রেপোর মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকার সীমার মধ্যে যে কোনো অংকের তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।

>> রেপোর সুদের হার নির্ধারিত থাকবে এবং কোনো ধরনের অকশনের প্রয়োজন হবে না।

>> ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য থেকে ট্রেজারি বন্ড বা বিল রেপোর মাধ্যমে এই তারল্য সুবিধা নিতে হবে।

>> বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯০ দিন মেয়াদী রেপো দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবারের নতুন সার্কুলারে বলা হয়, বর্তমান মুদ্রা বাজারের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে রেপোর সুদহার ৫ শতাংশের জায়গায় ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে আরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকেকে তিনি বলেন, “পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে গত ফেব্রুয়ারিতে একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যার কিছুটা প্রভাবও পড়েছিল বাজারে। যে ব্যাংকগুলোর তহবিলের সমস্যা ছিল, এখন রেপো সুদহার কমানোয় তারাও এগিয়ে আসবে। বাজার এমনিতেই এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে। নতুন এই সিদ্ধান্ত আরও ইতিবাচক হবে।”

পুঁজিবাজারে বড় ধসের পর গত ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজারের উন্নয়নে যে ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তাতে শেয়ার বাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। ব্যাংকের এ বিনিয়োগসীমার মধ্যে ব্যাংকের ধারণ করা সব ধরনের শেয়ার, ডিবেঞ্চার, করপোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নির্দেশনাপত্রের বাজারমূল্য ধরে মোট বিনিয়োগ হিসাব করা হয়।

২০০ কোটি টাকার যে ‘বিশেষ তহবিল’ গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল- তা এই বিনিয়োগ সীমার বাইরে থাকবে বলে নীতিমালায় বলা আছে।