পুঁজিবাজারে সর্বোচ্চ আইপিও এখন রবির

প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ৫২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার মূলধন সংগ্রহের অনুমতি পেয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেড।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2020, 12:34 PM
Updated : 17 Nov 2020, 03:03 PM

এর ফলে রবি আজিয়াটা দেশের সর্ববৃহৎ আইপিওধারী হলো বলে ইস্যু ব্যবস্থাপক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস জানিয়েছে।

এর আগে পুঁজিবাজারে সর্বোচ্চ আইপিও ছিল টেলিযোগাযোগ খাতে শীর্ষ কোম্পানি গ্রামীণফোনের, ৪৮৬ কোটি ৮ লাখ টাকা।

বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের আইপিও অনুমোদনের কথা জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

আইপিও আবেদনে অনুমোদনের জন্য বিএসইসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে রবি আজিয়াটা।

এক বিবৃতিতে কোম্পানির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, “এটি নিঃসন্দেহে রবির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ মূলধনী শেয়ার হিসেবে আমরা তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছি, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের।

“শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার অনুমোদন পাওয়ার মাধ্যমে রবিতে জনগণের অংশীদার হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।”

এ অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে সরকারের কাছে রবির যে ‘কিছু প্রত্যাশা’ ছিল ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে’ তা সদয় বিবেচনার অনুরোধ জানান তিনি।

বিএসইসির চাপের মুখে রবি আজিয়াটা পুঁজিবাজারে আইপিও ছাড়তে রাজি হলেও দুটি শর্ত দিয়েছিল।

এক. মোবাইল কোম্পানি হিসেবে রবি এখন টার্নওভারের ওপর যে ২ শতাংশ হারে কর দেয়, তার বদলে অন্য কোম্পানির মত শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ।

দুই. বিদ্যমান নিয়মে ৪৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট ট্যাক্সের বদলে রবি কর দেবে ৩৫ শতাংশ হারে। আর এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে দশ বছরের জন্য।

তবে এই দুই শর্তের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া এখনো পাওয়া যায়নি।

মোট ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা তহবিল সংগ্রহ করতে পুঁজিবাজারে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার ছাড়বে রবি আজিয়াটা। এই অর্থ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও আইপিও খাতে ব্যয় করবে রবি।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ কোম্পানি রবি আজিয়াটা ১৯৯৫ সালের ২২ অক্টোবর কার্যক্রম শুরু করে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইজাজউদ্দিন বিন ইদ্রিস।

রবি আজিয়াটা লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে কোম্পানটি ২৪ কোটি টাকা টাকা মুনাফা করেছে। ২০১৬ সালে কোম্পানিটি ৬৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা লোকসান করে। ২০১৭ সালে ১ কোটি ৫ লাখ লোকসান করে।২০১৮ সালে ২১ কোটি ৪৭ লাখ এবং ২০১৯ সালে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা মুনাফা করে।

২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির মোট সম্পদের পরিমাণ ১৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা।

২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির প্রতি শেয়ারে সম্পদ মূল্য ১২ টাকা ৬৪ পয়সা এবং প্রতি শেয়ারে মুনাফা দশমিক শূণ্য ৪ পয়সা। 

রবি আজিয়াটা লিমিটেডের আইপিও ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস।

কত শেয়ার ছেড়ে কত টাকা তুলবে রবি

রবির আইপিও ইস্যু ম্যানেজারের দায়ত্বে থাকা আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, রবি বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে ৩৮৭ কোটি ৭৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা তুলবে ।

এজন্য তারা ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ৪০০টি শেয়ার ছাড়বে। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য হবে ১০ টাকা।

এর বাইরে আরও ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৫০ হাজার ৯৩৪টি শেয়ার রবি তাদের কর্মীদের কাছে বিক্রি করেছে। সেখান থেকে তারা ১৩৬ কোটি ৫ লাখ ৯ হাজার ৩৪০ টাকা পেয়েছে।

সব মিলিয়ে রবি ৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৪টি শেয়ার থেকে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা তুলবে।

এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশের টাকা রবি পেয়ে গেছে। বিএসইসির অনুমোদন পেলে কর্মীদের শেয়ার বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে রবির আইপিও প্রসপেক্টাসে।

ত্বরান্বিত হবে তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন: আইডিএলসি

রবি আজিয়াটা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করছেন আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ খান।

রবির আইপিও বিএসইসি অনুমোদনের পর তাদের ইস্যু ব্যবস্থাপক আইডিএলসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই আশাবাদ প্রকাশ করা হয়।

আরিফ খান বলেন, “রবি আজিয়াটার এই আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিল তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

“ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে রবির এই অর্জনে সহযোগী হতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত। আইডিএলসি ভবিষ্যতেও এই ধরনের ইতিবাচক কার্যক্রম এর সাথে থাকবে।”

আইডিএলসি ২০১৮ সাল থেকে পরপর তিন বছর ইউরোমনি কর্তৃক ‘বাংলাদেশের সেরা বিনিয়োগ ব্যাংক’ হিসাবে পুরস্কৃত হয়েছে।

আইপিও, একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ ছাড়াও, আইডিএলসি পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট এবং মার্জিন ঋণ ব্যবসায় যুক্ত।

আরও পড়ুন