বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ১০ টাকায় কিনতে চায় বেক্সিমকো সিনথেটিকস

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানি বেক্সিমকো সিনথেটিকস লিমিটেড পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা প্রতিটি শেয়ার অভিহিত মূল্য ১০ টাকায় কিনে নেওয়ার আবেদন করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2020, 01:50 PM
Updated : 10 Sept 2020, 01:50 PM

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বেক্সিমকো সিনথেটিকস লিমিটেড কমিশনের কাছে একটি ‘গাইডলাইন’ চেয়েছে, সেখানেই তারা ওই প্রস্তাব দিয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী পুঁজিবাজারে এ কোম্পানির ৮ কোটি ৬৭ লাখ ১২ হাজার ৩৫৯টি শেয়ারের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৩৮ শতাংশই রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

এছাড়া ৩৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ শেয়ার পরিচালকদের হাতে, ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে এবং দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার বিদেশিদের হাতে রয়েছে।

এ কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল এফ রহমান। আর প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এ কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান।

লোকসানে ডুবে যাওয়া বেক্সিমকো সিনথেটিকস লিমিটেড ২০১২ সালের পর বিনিয়োগকারীদের আর লভ্যাংশ দিতে পারেনি।

২০১৭ সালে এ কোম্পানির লোকসান ছিল ২২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে ২৭ কোটি টাকা হয়। পরের বছর লোকসান আরও বেড়ে হয় ২৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

এ পরিস্থিতিতে বেক্সিমকো সিনথেটিকস স্বেচ্ছায় পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আবেদন করায় বিএসইসির নির্দেশে গত মঙ্গলবার থেকে এ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে।

এর আগে স্টক মার্কেট কর্তৃপক্ষ কয়েকটি কোম্পানিকে তালিকা থেকে বাদ দিলেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কোনো নিবন্ধিত কোম্পানির স্বেচ্ছায় তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আবেদন এটাই প্রথম।

যখন স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো কোম্পানিকে তালিকা থেকে বের করে দেয়, তখন স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্ব থাকে কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে শেয়ার হোল্ডারদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া। আর যখন কোনো কোম্পানি স্বেচ্ছায় তালিকা থেকে বেরিয়ে যেতে চায়, তখন ওই কোম্পানিকেই শেয়ার হোল্ডারদের টাকা বুঝিয়ে দিতে হয়।

বেক্সিমকো সিনথেটিকসের ১০ টাকা ফেইস ভ্যালুর শেয়ার গত সোমবার শেষবার লেনদেন হয় ৮ টাকা ৪০ পয়সায়। বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ার এখন তারা ফেইসভ্যালুর ওই ১০ টাকা দিয়েই কিনে নিতে চাইছে।

এর প্রক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুঁজিবাজারে এই মুহূর্তে কোম্পানির শেয়ার কোম্পানি নিজে কিনে ফেলার কোনো নিয়ম নেই।

“এছাড়া কাগজের শেয়ার থেকে ইলেকট্রনিক শেয়ার হওয়ার পরে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তাই কীভাবে বেক্সিমকো সিনথেটিকস বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে নেবে সেটার কর্মপদ্ধতি এখনই বলা যাচ্ছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেটা বলে দেবে।”

১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু করা বেক্সিমকো সিনথেটিকস ১৯৯৩ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এবং ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। সাভারের কবিরপুরে তাদের কারখানায় উৎপাদন করা হত পলিয়েস্টার সুতা।

মঙ্গলবার বেক্সিমকো সিনথেটিকসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৯৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তারা নিয়মিত লভ্যাংশ ঘোষণা করে এলেও এরপর কোম্পানি ‘কঠিন পরিস্থিতিতে’ পড়ে।

সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেওয়ায় বিদেশ থেকে সস্তা পলিয়েস্টার সুতা আসতে থাকে এবং প্রতিযোগিতায় পেরে না ওঠায় ক্ষতির মুখে পড়ে বেক্সিমকো সিনথেটিকসের ব্যবসা।

ফলে গত সাত বছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি পুঁজিবাজারে তালিতাভুক্ত এ কোম্পানি। গত কয়েক বছর ধরে বাজারে এ শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ফেইস ভ্যালুর নিচে।

এই পরিস্থিতিতে বেক্সিমকো সিনথেটিকস শেষ পর্যন্ত উৎপাদন ও কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে এবং সকল কর্মী ও অধিকাংশ কর্মকর্তাকে আইন অনুযায়ী তাদের ‘পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।

বেক্সিমকো সিনথেটিকসের বর্তমান বজার মূলধন ৭৩ কোটি টাকা, আর পরিশোধিত মূলধন ৮৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা; রিজার্ভের পরিমাণ ৩৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।