দীর্ঘ খরার পর ফুরফুরে পুঁজিবাজার

টানা ১০ সপ্তাহ ধরে সূচকে রয়েছে চাঙাভাব, দীর্ঘদিন পর দেশের পুঁজিবাজার চলছে ফুরফুরে মেজাজে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2020, 05:07 AM
Updated : 29 August 2020, 05:07 AM

মহামারী শুরুর পর গত জুনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স যেখানে ৪ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গিয়েছিল, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার তা পৌঁছেছে ৪ হাজার ৯০০ পয়েন্টের কাছাকাছি। 

জুন মাসেই এক পর্যায়ে লেনদেন নেমে গিয়েছিল ৫০ কোটির ঘরে; সেই দশা কাটিয়ে গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮২৮ কোটি টাকার বেশি।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখনও সেভাবে কমেনি, অর্থনীতির চাকাও সচল হয়নি পুরোপুরি। তাহলে সঙ্কটের মধ্যেই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াল কীভাবে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা সক্রিয় হওয়ায় সমন্বয়হীনতা কমেছে, তার সুফল পাচ্ছে বাজার। ব্যাংকে সুদের হার কমে আসায় নতুন বিনিয়োগ পাচ্ছে পুঁজিবাজার।

ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্য রেগুলেটরের মধ্যে একটা সমন্বয় করা হয়েছে, যা আগে ছিল না। ফলে এখন আর আগের মতো বাধা আসছে না। আগে মাঝে মাঝে এমন সব নীতি হয়ে যেত, যা পুঁজিবাজারকে বাধাগ্রস্ত করত।”

২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে তারল্য সঙ্কট দেখা দেওয়ার পর ঋণ-আমানত (এডি) অনুপাত কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ক্ষমতা কমে যায়, সুদের হার যায় বেড়ে। তখন থেকে পতন শুরু হয় পুঁজিবাজারে।

সেই সঙ্কট কাটাতে না পেরে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেওয়া হয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য।

কিন্তু এর মধ্যেই করোনাভাইরাস মহামারীতে বড় রকমের চাপে পড়ে দেশের অর্থনীতি। তারল্য আর আস্থার সঙ্কটে থাকা পুঁজিবাজারেও সেই ধাক্কা লাগে।

এর মধ্যে পতন থামাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম বদলে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়। তাতে পত ঠেকানো গেলেও বিনিয়োগে দেখা দেয় খরা।

সব মিলিয়ে ২০১৮ সালের শুরু থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক প্রায় ২০০০ পয়েন্ট হারায়।

জুলাই মাসের শেষে দিকেই ঘুরে দাঁড়াতে থাকে বাজার। এর মধ্যে গত ১০ সপ্তাহেই ডিএসইর প্রধান সূচকে যোগ হয়েছে ৯০০ পয়েন্টের বেশি।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসাইন বলেন, বাজার অনেক পড়ে যাওয়ায় শেয়ারের দামও অনেক কমে গিয়েছিল। বাজারে আসার জন্য এটা ছিল ভালো সময়। সেই সুযোগটাই বিনিয়োগকারীরা নিয়েছেন। বাজারে মানুষের ‘আস্থা’ও ফিরতে শুরু করেছে।

‘আস্থা’ ফেরার কথা বলেছেন মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ এ হাফিজও।

তার ভাষায়, “আস্থা পুঁজিবাজারে জাদুর মতো কাজ করে। যখন আস্থা ছিল না, কোথাও কোনো টাকা ছিল না। আস্থা বাড়ায় মানুষ এখন টাকা নিয়ে পুঁজিবাজারে আসছে।”      

এই ‘আস্থা’ ফেরার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় আহমেদ রশিদ লালীর কথায়।

তিনি বলেন, আগের কমিশন (বিএসইসি) নিয়ম করেছিল, তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক হতে হলে ২ শতাংশ শেয়ার ধারন করতে হবে এবং কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে।

“বর্তমান কমিশন এ বিষয়টি বাস্তবায়ন করার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে। তাতে পুঁজিবাজারের ওপরে মানুষের আস্থা বেড়েছে।”

তাছাড়া ব্যাংকের সুদের হার কমায় মানুষ এখন পুঁজিবাজারে আসতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন তিনি।

“ব্যাংকে আমানতের সুদের হার এখন ৬ শতাংশ, ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ। ব্যাংকগুলোতে তারল্য সঙ্কট নেই। এর ফলে দুটো ইতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে এসেছে। ব্যাংকগুলোও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে।”

বড় বিনিয়োগকারীরাও এখন পুঁজিবাজারে ফিরছে মন্তব্য করে আহমেদ রশিদ লালী বলেন, “বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যারা বড় বিনিয়োগকারী, তারা এতদিন বিনিয়োগ না করে বসেছিলেন। এখন তারা আস্তে আস্তে ফিরে আসছেন।”

এই অবস্থায় পুঁজিবাজারকে তার নিজের গতিতে চলতে দিলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে বলেই ডিবিএ-এর সাবেক সভাপতির বিশ্বাস।

“সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে দেখতে হবে, পুঁজিবাজারে কেউ যেন শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজি করতে না পারে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে যেন সুশাসন থাকে। তাহলে বাজারের এই ভাল অবস্থা বজায় থাকবে।”