করোনাভাইরাস সঙ্কটে অর্থের জোগান বাড়াতে রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) ও রিভার্স রেপোর সুদহার আরও এক দফা কমিয়ে বুধবার ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসাইন বলেন, এই মুদ্রানীতি পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ টানতে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।
“এখন ব্যাংকগুলোর কাছে পুঁজিবাজার হবে ভাল বিনিয়োগের স্থান। কারণ পুঁজিবাজারে এখন অনেক শেয়ার আছে যেগুলো কম দামে কেনা যাবে। যে কোনো বিনিয়োগ থেকে তারা বেশি মুনাফা দেবে।”
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরীও এ মুদ্রানীতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
লংকাবাংলার পুঁজিবাজার কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির বলেন, “মুদ্রানীতিতে রেপো এবং রিভার্স রেপোর হার কমানো হয়েছে। এর ফলে সুদের হার কমে যাবে। অর্থনীতিতে তারল্য বাড়বে। পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়বে। পুঁজিবাজারে অনেক শেয়ারের দাম কম, সেখানে বিনিয়োগ হবে।”
ব্যাংকগুলো যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। মুদ্রানীতিতে রেপোর হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে।
রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। এক্ষেত্রে সুদহার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে।
রেপোর সুদ কমলে ব্যাংকগুলো কম খরচে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তহবিল পাবে। তাতে তারা কম সুদে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের ঋণ দিতে পারবে।
অন্যদিকে রিভার্স রেপোর সুদ হার কমানোর অর্থ হলো, ব্যাংকগুলোকে চাপ দেওয়া, যাতে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা ফেলে রেখে মুনাফা না তুলে ব্যবসা ও উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়ায়।
শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হাসান বলেন, “এই সম্প্রসারণমুখী মুদ্রানীতি পুঁজিবাজারে খুবই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে তারল্য সঙ্কট দেখা দেওয়ার পর ঋণ-আমানত (এডি) অনুপাত কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ক্ষমতা কমে যায়, সুদের হার যায় বেড়ে। তখন থেকে পতন শুরু হয় পুঁজিবাজারে।
সেই সঙ্কট কাটাতে না পেরে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেওয়া হয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য।
কিন্তু এর মধ্যেই করোনাভাইরাস মহামারীতে বড় রকমের চাপে পড়ে দেশের অর্থনীতি। তারল্য আর আস্থার সঙ্কটে থাকা পুঁজিবাজারেও সেই ধাক্কা লাগে।
এর মধ্যে পতন থামাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম বদলে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়। তাতে পত ঠেকানো গেলেও বিনিয়োগে দেখা দেয় খরা।
সব মিলিয়ে ২০১৮ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক প্রায় ২০০০ পয়েন্ট হারিয়েছে। যার মধ্যে গত এক বছরেই কেমেছে প্রায় ১ হাজার পয়েন্ট।
এখন মুদ্রানীতিতে রেপো এবং রিভার্স রেপোর হার কমিয়ে দেওয়ার ফলে আরেক দফা তারল্য বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাতে ব্যাংক ও সাধারণ বিনিয়োগকারী দুপক্ষের জন্যই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ এ হাফিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুবই সময়োযোগী মুদ্রানীতি হয়েছে। এই মুদ্রানীতি যেমন অর্থবাজারের জন্য ভালো, তেমন পুঁজিবাজারের জন্যও ভাল।”