পুঁজিবাজারের জন্য ‘ইতিবাচক’ বাজেট

দীর্ঘদিন ধরে তারল্য সংকটের পর মহামারী মধ্যে ধস নামা পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে আসছে বাজেটে যে সব প্রস্তাব করা তাতে মোটা দাগে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2020, 07:39 PM
Updated : 18 Oct 2021, 12:22 PM

এক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ‘কালো টাকা সাদা’করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাতে বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়বে বলে তাদের ধারণা।

সেসঙ্গে একটি শক্তিশালী বন্ডবাজার গড়তে ‘বড় অন্তরায়’ বন্ডের উৎসে কর কাটার বিদ্যমান নিয়মে যে পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবে বলে মনে করছেন তারা।

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য ১০ শতাংশ কর দিয়ে একবছরের জন্য পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে তিন বছরের মধ্যে বিনিয়োগ প্রত্যাহার না করার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রকিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুঁজিবাজারের বাইরেও ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়ার সঙ্গে অর্থনীতিতেও মুদ্রাপ্রবাহ বাড়বে। সেটা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, বাজেটে সকল বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে। এটা দেশের সকল স্তরের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশে শক্তিশালী বন্ড বাজার গড়ে তুলতে লেনদেন মূল্যের উপর উৎসে কর কর্তনের নিয়ম পাল্টে লেনদেনের কমিশনের উপর উৎসে কাটার প্রস্তাব করা হয়েছে।  সেসঙ্গে বন্ডের সুদ ও বাট্টার উপর আগাম উৎসে কর কাটার পরিবর্তে সুদ ও বাট্টা পরিশোধের সময় কাটার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে।

এবিষয়ে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, “এই সিদ্ধান্ত শক্তিশালী বন্ড বাজার গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। এত দিন  লেনদেনের মূল্যের উপর উৎসে কর কাটার ফলে অনেক টাকা কর দিতে হত এটা বন্ড বাজার গড়ে তুলতে সবচেয়ে বড় অন্তরায় ছিল। এখন বন্ড মার্কেট ভাল হবে।”

সব মিলিয়ে বাজেটকে ‘ব্যবসা ও পুঁজিবাজার বান্ধব’ হিসেবে বর্ণনা করে রকিবুর বলেন, “এই বাজেটে বন্ড বাজারকে শক্তিশালী করার জন্য খুব ভালো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বন্ডের লেনদেন সহজ করা হয়েছে।

“ফলে এটা পুঁজিবাজারের জন্য যেমন ভালো হবে বিনিয়োগকারীদের জন্যও ভালো হবে।”

তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর্পোরেট করহার ৩৫ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাবকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী টানার পথে অন্তরায় হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।

ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সদস্য ও  সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,এটা পুঁজিবাজারে ভাল কোম্পানি আসারে ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে।

আহমেদ রশিদ লালী বলেন, আগে তালিকাভুক্ত-অতালিকাভুক্ত কোম্পানি কর হারের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ পার্থক্য ছিল। তখনই ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহ দেখায়নি।

“সেখানে এখন পার্থক্য আগের চেয়ে আরও কমে গেল। এর ফলে ভালো ভালো কোম্পানি কতটা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে সে নিয়ে একটা সংশয় থেকে যায়।”

বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এরকম কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশ এবং তালিকাভুক্ত নয় এরকম কোম্পানির কর হার ৩৫ শতাংশ।