পুঁজিবাজারে আসতে রবির দুই শর্ত

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেও তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য সরকারের সামনে কর ছাড়ের দুটি শর্ত দিয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2020, 05:41 PM
Updated : 22 Feb 2020, 05:41 PM

প্রথম শর্ত হল- মোবাইল কোম্পানি হিসেবে রবি এখন টার্নওভারের ওপর যে ২ শতাংশ হারে কর দেয়, তার বদলে তারা অন্য কোম্পানির মত শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে কর দেবে। 

আর দ্বিতীয় শর্ত হল, বিদ্যমান নিয়মে ৪৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট ট্যাক্সের বদলে রবি কর দেবে ৩৫ শতাংশ হারে। আর এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে দশ বছরের জন্য।

রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, শর্ত দুটি মেনে নিলে এই বছরই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে রবি।

রবির মূল মালিক কোম্পানি আজিয়াটা শুক্রবার মালয়েশিয়া স্টক এক্সচেঞ্জে এক ঘোষণায় জানায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে দশ টাকা অভিহিত মূল্যের ৫২ কোটি ৩৮ লাখ শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনা সাজিয়েছে তারা, যার মাধ্যমে তারা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবে ৫২৩ কোটি টাকা।

ঘোষণায় বলা হয়, আইপিরও জন্য আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব দিয়েছে রবি। চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) মধ্যেই আইপিও এবং নিবন্ধনের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছে।

আজিয়াটার ওই ঘোষণার পরদিন গুলশানে রবির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৯ সালে কোম্পানির আর্থিক ফলাফল এবং ২০২০ সালের রবির পরিকল্পনা তুলে ধরতে এসে দুই শর্তের কথা জানান মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, “পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিএসইসি) গতবছর আমাদের ডেকেছিল। তখন আমাদেরকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে বলা হয়।

“আমরা বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ায় আমাদের প্রধান কোম্পানির সঙ্গে আলাপ করি। তারা আমাদেরকে কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে যেতে বলেছে। তবে আমাদের কিছু ডিমান্ড আছে সেটা যদি ফুলফিল হয়, তাহলে আমরা দ্রুত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হব এবং বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে একটি অত্যন্ত ভালো মানের আইপিও উপহার দিতে পারব।”

টার্নওভারের ওপর কর ছাড়ের দাবির বিষয়ে রবি বলছে, মোবাইল অপারেটরদের টার্নওভারের ওপর ২ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। কিন্তু অন্য ব্যবসার ক্ষেত্রে টার্নওভারের উপর কর হয় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে। রবি অন্যদের মত টার্নওভারের ওপর শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে কর দিতে চাইছে।

আর কর্পোরেট করে ছাড়ের দাবির বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা, রবিকে এখন ৪৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। তালিকাভুক্ত হওয়ার পর রবি ৩৫ শতাংশ হারে কর দিতে চায়। তাদের এই সুবিধা দিতে হবে অন্তত দশ বছর। 

এর আগে দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেট গ্রামীণফোনকেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় কম কর্পোরেট ট্যাক্স দেওয়ার এই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর পর তা উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ কারণে রবি ১০ বছরের নিশ্চয়তা চাইছে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে গ্রামীণফোন এখন ৪০ শতাংশ হারে কর্পোরেট ট্যাক্স দিচ্ছে। রবি তার চেয়েও বেশি সুবিধা চাইছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রবি এখনো বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আইপিওর জন্য আবেদন করেনি। তবে রবির মূল কোম্পানি আজিয়াটা যেহেতু মালয়েশিয়ায় একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি, সেহেতু ‘প্রাইস সেনসেটিভ ইনফরমেশন’ হিসেবে তারা রবির আইপিওর প্রস্তুতির বিষয়টি সেখানে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।

দেশে রবির সেবাগ্রহীতার সংখ্যা এখন ৪ কোটি ৯০ লাখ, যা দেশের মোট গ্রাহক সংখ্যার ২৯.৬ শতাংশ। মালয়েশিয়ার কোম্পানি আজিয়াটা রবির ৬৮.৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

দেশের চার মোবাইল অপারেটরের মধ্যে বর্তমানে কেবল গ্রামীণফোন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। সে কারণে রবিকে শেয়ারবাজারে আনার চেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই।

২০১৭ সালে ফোরজি লাইসেন্সের নীতিমালায় টেলিকম খাতের কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আসার শর্ত দেওয়া হলেও সেখানে কোনো সময় বেঁধে না দেওয়ায় রবি এখনও তালিকাভুক্তির বাইরে রয়ে গেছে।

মাহতাব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে রবির একটি প্রতিনিধি দল ২০১৫ সালে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। তখনও কর রেয়াত ও নীতি সহায়তা চাওয়া হয়েছিল রবির পক্ষ থেকে।

কিন্তু এয়ারটেলের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রবি মুনাফার ধারা থেকে ছিটকে গেলে তালিকাভুক্তির বিষয়টিও থমকে যায়। সেই জটিলতা সামলে ওঠার পর গতবছর অক্টোম্বরে বিএসইসির সঙ্গে আবারও বৈঠক হয় রবির।   

শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৯ সালে রবির মোট রাজস্ব আয় করেছে ৭ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা, যার মধ্যে কর পরবর্তী মুনাফা ছিল ১৭ কোটি টাকা এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা।

গত বছর ২১ লাখ নতুন গ্রাহক পেয়েছে রবি। ৩ কোটি ১৩ লাখ গ্রাহক রবির ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ২০২০ সালে রবি বাংলাদেশ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

কোম্পানির বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন রবির চিফ কমার্শিয়াল অফিসার শিহাব আহমেদ। এছাড়া চিফ এন্টারপ্রাইজ বিজনেস অফিসার আদিল হোসেন নোবেল রবির মার্কেটিং পলিসি নিয়ে কথা বলেন।