ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল যোগানোর ঘোষণায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাজার। গত সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সোমবার এই তহবিল যোগানের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপর থেকেই চাঙ্গা বাজার।
সেই ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে প্রায় ১৭০ পয়েন্ট। লেনদেন নয়শ’ কোটি টাকার ‘ঘর’ অতিক্রম করেছে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫৩৩ পয়েন্ট।
বাজারের এই উত্থানকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
“আরেকটি বিষয় বাজারের উত্থানের পেছনে কাজ করেছে। সেটি হচ্ছে, শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত ছিল। অনেক ভালো ভালো শেয়ারের দামও অনেক কমে গিয়েছিল। সে জায়গা থেকে বাজারে উল্লম্ফন হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ছিল “
“মোট কথা বাজারে আস্থা ফিরে আসছে। যে বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তারা আবার ফিরতে শুরু করেছে।”
তবে এই মুহূর্তে সবাইকে ‘দেখেশুনে’ বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন আজিজুল ইসলাম।
“সবাইকে মনে রাখতে হবে, আপনি যে শেয়ারটি কিনছেন তার অতীত রেকর্ড কি? যদি কোম্পানিটির মালিকানা বা ব্যবস্থাপনা ভালো হয়, আগের বছরগুলোতে ভালো লভ্যাংশ দিয়ে থাকে; কোনও দুর্ণাম নেই তাহলেই সেই কোম্পানির শেয়ার কিনবেন।”
“গুজবে মন্দ বা খারাপ কোম্পানির শেয়ার কিনলে কিন্তু আবার ঠকবেন; এটা মনে রেখেই বিনিয়োগ করতে হবে।”
“এখন বাজার ভালো না হওয়ার কোনও কারণ নেই।”
বাজার পরিস্থিতি
১০ জানুয়ারি সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল যোগানোর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বাজার তেজিভাবে ফিরতে শুরু করে। মঙ্গল, বুধ এবং বৃহস্পতিবার -এই তিন দিনে ডিএসইএক্স প্রায় ২০০ পয়েন্টের মতো বাড়ে।
সেই উর্ধ্বমুখি ধারায় চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববারও উল্লম্ফন হয়েছে বাজারে।
ঢাকায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে প্রায় ১৭০ পয়েন্ট। শতাংশ হিসাবে যা প্রায় পৌণে ৪ শতাংশ; অবস্থান করছে ৪ হাজার ৭৩৪ দশমিক ১৫ পয়েন্টে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা নির্দেশনার পর ১৯ জানুয়ারি ডিএসইএক্স ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বা ২৩২ পয়েন্ট বেড়েছিল।
সাত বছর আগে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে নতুন এই সূচক চালু হওয়ার পর এত বড় উত্থান দেখা যায়নি।
এর আগে ডিএসইর পুরনো সূচক ডিজিইন থাকার সময় ২০১২ সালে ৭ই ফেব্রুয়ারি সূচক বেড়েছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ; সেদিন ৩২৯ পয়েন্ট বেড়ে ডিজিইএন হয়েছিল ৩ হাজার ৯৪৫।
রোববার ঢাকায় ৯১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের অংক ছিল ৭৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) রোববার প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৫৩৩ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা প্রায় ৪ শতাংশ বেড়ে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৪৩৬ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে।
রোববার সিএসইতে ৩০ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
রোববার ডিএসইতে অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ২৯ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭৫ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ৫৫ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৫৯২ পয়েন্টে।
লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৫৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৯৩টির আর কমেছে ৪০টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টি কোম্পানির শেয়ার দর।
অন্যদিকে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৬৮টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২১৪ টির, কমেছে ৩৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭টির দর।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সরকার ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল যোগানোর ঘোষণা দেয়।
জানুয়ারিতে পুঁজিবাজারে বড় ধসের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে সপ্তাহ খানেক সূচকে উন্নতি দেখা গেলেও তা স্থায়ী হচ্ছিল না।
এরই মধ্যে সোমবার পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তারল্য সুবিধা ও নীতিসহায়তা দেওয়ার ঘোষণা আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণায় বলা হয়, এখন থেকে যে কোনো ব্যাংক তার নির্ধারিত সীমার বাইরেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকার ‘বিশেষ তহবিল’ গঠন করতে পারবে।
ব্যাংকগুলো নিজস্ব অর্থে এই তহবিল গঠন করতে পারবে। তা না পারলে ট্রেজারি বিল/ট্রেজারি বন্ড রেপোর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তহবিল গঠন করতে পারবে।