আইপিও’র টাকা নয়-ছয়: আমান ফিডকে কোটি টাকা জরিমানা

আইপিও’র (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আমান ফিডের চার পরিচালককে এক কোটি টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2020, 06:00 PM
Updated : 28 Jan 2020, 06:00 PM

মঙ্গলবার বিএসইসি’র কমিশন সভায় জরিমানার এই সিদ্ধান্ত হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সংস্থার চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন সভায় সভাপতিত্ব করেন।

আমান ফিডের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসি। কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা তুলে সঠিকভাবে ব্যবহার করেনি। নির্ধারিত খাতে টাকা ব্যয় না করে বিএসইসির কাছে মিথ্যা প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এই অপরাধে কোম্পানির চার পরিচালককে ২৫ লাখ টাকা করে মোট এক কোটি টাকা জরিমানা করেছে কমিশন।

আমান ফিডের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদে পাঁচ জন সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন, চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম, পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম এবং আজিজুল হক।

আজিজুল হক একজন মনোনীত পরিচালক।তিনি পর্ষদে আমান ফিডের উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন আমান এগ্রো নামের অন্য একটি কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাকে অবশ্য জরিমানা করেনি বিএসইসি।

আমান ফিড লিমিটেড ২০১৫ সালে আইপিও ইস্যু করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৭২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কোম্পানিটি আইপিওতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারে ২৬ টাকা করে প্রিমিয়াম নিয়ে ৩৬ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করে।

কশিনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ম্যাবস এন্ড জে পার্টনার্স চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট আমান ফিড লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করে দেখেছে যে, আমান ফিড আইপিওর টাকা ব্যবহার নিয়ে মিথ্যাচার করেছে।

বিধি অনুসারে, আইপিওর টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা হবে তা প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করতে হয়। কোনো কারণে ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় পরিবর্তন এলে বা অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ করতে চাইলে সাধারণ সভা ডেকে শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি ও বিএসইসির অনুমতি নিতে হয়। এছাড়া আইপিওর অর্থ ব্যবহারের হালনাগাদ তথ্য জানিয়ে নিয়মিতভাবে বিএসইসিতে প্রতিবেদন পাঠাতে হয়।

ওই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টের মাধ্যমে সত্যায়িত করতে হয়। আমান ফিড কর্তৃপক্ষ অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার না করে বিএসইসিকে মিথ্য তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আমান ফিডের আইপিও’র টাকা ব্যবহারে দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি প্রতিষ্ঠান একনাবিন এবং একনাবিনের একজন পার্টনার মো: রোকনুজ্জামান এফসিএ এর বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি।

একনাবিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। আর রোকনুজ্জামানের উপর অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে রোকনুজ্জামান আইপিওতে আসা কোনো কোম্পানির অর্থ ব্যবহারের নিরীক্ষা করতে পারবেন না।

২০১০ সালের ধসের পর পুঁজিবাজারে মোট ৯৩টি আইপিও এসেছে। এই আইপিও’র বেশিরভাগই ভালো নয় বলে অভিযোগ আছে।

২০২০ সালের বড় ধসের জন্য এই ‘খারাপ’ আইপিওকে দায়ী করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস

এছাড়া কমিশনের সভায় আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত না করায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলসের প্রত্যেক পরিচালকে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালককে এই জরিমানা দিতে হবে না।