নতুন বছরে পুঁজিবাজার নিয়ে আশা

বিদায়ী বছরের মন্দা কাটিয়ে নতুন বছরে পুঁজিবাজার নিয়ে আশা দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

রিয়াজুল বাশারও ফারহান ফেরদৌসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2020, 10:10 AM
Updated : 4 Jan 2020, 10:10 AM

তাদের মতে, মন্দার কবলে পড়ে সূচক অনেক নিচে নেমে আসা এবং ব্যাংকের সুদের হার কমানোর ঘোষণাসহ কয়েকটি কারণ পুঁজিবাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি করেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, “নতুন বছরে বাজার ভালো হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।”

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হাসান বলেন, “যেহেতু শেয়ারের দাম অনেক কমে গেছে সেহেতু পুঁজিবাজার ভালো হওয়ার কথা।”

২০১০ সালে বড় ধসের পর ২০১৯ সালে বড় মন্দা চলেছে পুঁজিবাজারে। ২০১৬ সালের শেষ দিকে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ২০১৮ সাল থেকে আবার পতনের ধারা শুরু হয়। ২০১৯ সালে বাজার আরও খারাপ হয়ে সূচক ফিরে যায় সাড়ে তিন বছরের আগের অবস্থানে। 

রেমিটেন্স ছাড়া অর্ধনীতির সব সূচকের নেতিবাচক অবস্থানে থাকা, বাজারে তারল্য সঙ্কট, গ্রামীণফোনের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার টানাপড়েন এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনীহা তৈরি হওয়ায় বছরজুড়েই ভুগেছে পুঁজিবাজার।

২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫৪৬৫ দশমিক ২৫ পয়েন্ট। ৩০ ডিসেম্বর সূচক নেমে দাঁড়ায় ৪৪৫২ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। সে হিসেবে এক বছরে সূচক নেমেছে ১০১২ পয়েন্ট বা ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।

নতুন বছরের প্রথম দুদিনে ডিএসইএর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ইতিবাচক। এ দুদিনে ডিএসইএক্স বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ পয়েন্টের মতো, বেড়ে হয়েছে ৪৪৫৯ পয়েন্ট।

বাজার কেন ভালো হওয়ার সুযোগ রয়েছে- সে ব্যাখ্যায় শাকিল রিজভী বলেন, প্রথম কারণ সূচক অনেক নেমে এসেছে। এর নিচে নামবে বলে মনে হয় না। ধীরে ধীরে উঠবে।

“ব্যাংকের আমানত ও ঋণ সুদহারও কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এরফলে পুঁজিবাজার লাভবান হবে। কারণ ব্যাংকের সুদহারের সঙ্গে পুঁজিবাজারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমানতের সুদহার বেড়ে গেলে বিনিয়োগকারী ব্যাংকের দিকে ঝোঁকে। আর কমলে পুঁজিবাজারে আসে। আবার ঋণের সুদহার কমলে কোম্পানিগুলোর অতিরিক্ত সুদ না দেওয়ার কারণে মুনাফা বাড়ে। এর প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ে।”

আগামী এপ্রিল থেকে ব্যাংগুলোর ঋণ ও আমানতে সুদহার ৯ ও ৬ শতাংশে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বছরের শুরুতেই বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ঠদের নিয়েও বৈঠক করেছেন তিনি।

তবে রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির সব সূচক যে নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে, সেটাও ভাবাচ্ছে বাজার সংশ্লিষ্টদের।

তবে সরকার যদি অর্থনীতির গতি ভালো রাখতে পারে, তাহলে বছরজুড়েই পুঁজিবাজারে ‘বুলিশ ট্রেন্ড’ থাকবে বলে আশা করছেন এমরান।

সাপ্তাহিক বাজার চিত্র

ব্যাংক হলিডের কারণে বছরের শেষ দিন পুঁজিবাজার বন্ধ থাকার কারণে গত সপ্তাহে চার দিন লেনদেন হয়েছে ডিএসইতে। এরমধ্যে নতুন বছরের দুদিন এবং বিদায়ী বছরের দুদিন।

গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪০ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৪৫৯ পয়েন্টে। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩২৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ২১ শতাংশ বেশি।

ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৩৫৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩২টির, কমেছে ৮৬টির এবং অপরিবর্তি রয়েছে ৩৮টির দাম।

লেনেদেনের শীর্ষে ছিল- খুলনা পাওয়ার, স্টান্ডার্ড সিরামিক, ব্র্যাক ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা ও বিকন ফার্মা।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল- ওয়াইম্যাক্স ইলেকেট্রড, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং, খুলনা পাওয়ার, স্টান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স ও আমরা টেকনোলজিস। দর কমার শীর্ষে ছিল- অ্যাপোলো ইস্পাত, নর্দান জুট, ব্র্যাক ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্স ও জাহিন টেক্সটাইল।