পুঁজি হারিয়ে ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীই হতাশ-ক্ষুব্ধ। পতন ঠেকাতে জরুরিভিত্তিতে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ঢাকায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ২ শতাংশের মতো কমে ৪ হাজার ৪১৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
এই সূচক সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে এর চেয়ে কম ছিল ২০১৬ সালের ২৭ জুন; সেদিন সূচক ছিল ৪ হাজার ৪১২ পয়েন্ট।
এই বাজারে অন্য দুই সূচকও পড়েছে ২ শতাংশ করে।
লেনদেনও নেমে এসেছে তলানীতে। মঙ্গলবার এই বাজারে ২৮১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জেও (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২ শতাংশের মতো কমেছে।
গত সপ্তাহেও বাজারে বড় দরপতন হয়। তার ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহও শুরু হয় পতনের মধ্য দিয়ে। সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার ডিএসইএক্স ১৬ পয়েন্ট পড়ে যায়। সোমবার বিজয় দিবসের ছুটি ছিল। মঙ্গলবার লেনদেন শুরু হওয়ার পর থেকেই বাজার পড়তে শুরু করে।
চলতি বছরের শুরুতে ডিএসই’র প্রধান সূচক প্রায় ৬ হাজার পয়েন্টে উঠেছিল। বছরের শেষ ভাগে এসে সেই সূচক এক হাজার ৬০০ পয়েন্ট হারিয়ে ৪ হাজার ৪০০ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
বছরের শুরুতে দৈনিক লেনদেন ছিল ১ হাজার কোটি টাকার মতো। এখন লেনদেন হচ্ছে তিনশ কোটি টাকার নিচে।
বেশ কয়েক মাস ধরে পুঁজিবাজারে দরপতন চলছে। এখন লেনদেন শুরু হলেই পড়ছে সূচক।
কিন্তু এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও অর্থমন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বৈঠকের ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি বলে ডিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
বাজার বিশ্লেষক ডিএসই’র সাবেক সহ-সভাপতি এবং ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুবই খারাপ অবস্থা। বাজার যে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে কিছু বুঝতে পারছি না …। লেনদেন শুরু হলেই বাজার পড়ছে। ছোট-বড়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।”
“বাজার এখন ভালো হওয়ার কোনো শক্তিই নেই। ভালো-মন্দ সব শেয়ারের দামই কমতে কমতে একেবারেই শেষ প্রান্তে নেমে এসেছে। এখন কেনার সময়। আমরা ভেবেছিলাম, কম দামে সবাই কেনা শুরু করলে বাজার তার নিজস্ব শক্তিতেই ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু সেটাও হচ্ছে না। এখানেই বড় উদ্বেগের বিষয়।”
“আসলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। অর্থনীতির অবস্থাও ভালো না। মানুষের হাতে টাকাও নেই। সবমিলিয়েই বাজারের খারাপ অবস্থা কাটছে না।”
বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর কি কোনো সম্ভাবনা নেই- এ প্রশ্নের উত্তরে লালী বলেন, “একমাত্র উপায় আছে। সরকারের সাপোর্ট। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে যে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল চাওয়া হয়েছিল সেটা দ্রুত দিয়ে এখন বাজার স্বাভাবিক করতে হবে।”
“এই ১০ হাজার কোটি টাকা শুধু আইসিবিকে দিলে হবে না। ভালো ভালো ব্রোকার হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকেও দিতে হবে।”
“বিশ্বের সব শেয়ার বজারেই ভালো অবস্থা। পাকিস্তানের শেয়ারের সূচক ১১ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। গতকালও ভারতের শেয়ার বাজারের সূচক ২০০ পয়েন্ট বেড়েছে। শুধু আমাদেরটাই উল্টো পথে চলছে।”
আরেক বাজার বিশ্লেষক পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে করেই হোক বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এই মূহুর্তে এটা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।”
বাজার পরিস্থিতি
মঙ্গলবার প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৮ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ৪ হাজার ৪১৯ দশমিক ৮২ পয়েন্টে।
এই সূচক প্রায় ৪২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে এর চেয়ে কম ছিল ২০১৬ সালের ২৭ জুন; সেদিন সূচক ছিল ৪ হাজার ৪১২ পয়েন্ট।
মঙ্গলবার ২৮১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। রোববার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩০৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
অন্য দিকে সিএসইতে মঙ্গলবার ১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। রোববার লেনদেনের অংক ছিল ১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার ঢাকায় ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এরমধ্যে দর বেড়েছে ৩৫টির, কমেছে ২৭৮টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০টি কোম্পানির দর।
ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ২০ দশমিক ২৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯৯৪ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ৩০ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৫০৮ দশমিক ২৮ পয়েন্টে।
সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৩০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এরমধ্যে দর বেড়েছে ৩০টির, কমেছে১৭৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির দর।