পুঁজিবাজার এখন এমনিতেই ভালো হবে: শাকিল রিজভী

পুঁজিবাজার নিয়ে সব পক্ষ থেকে হতাশার সুর বইলেও বাজার বিশ্লেষক শাকিল রিজভী বলছেন, এখন আর কিছু করার দরকার নেই, বাজার এমনিতেই ভালো হবে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2019, 01:54 PM
Updated : 10 Dec 2019, 01:54 PM

এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল বলেছেন, সব শেয়ারের দাম অনেক পড়ে গেছে। এখন বাজার তার নিজম্ব শক্তিতেই ভালো হবে।

বেশ কয়েক মাস ধরে পুঁজিবাজারে দরপতন চলছে। টানা চার দিনের পতনে প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০০ পয়েন্ট পড়ে গেছে।

লেনদেন নেমে এসেছে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে। লেনদেন শুরু হলেই কমছে সূচক।

ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীই হতাশ-ক্ষুব্ধ। পতন ঠেকাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করতে সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ।

এই প্রেক্ষাপটে বাজারের দুরাবস্থা কাটাতে কী উদ্যোগ নিতে হবে-সে প্রশ্ন করা হয়েছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভীকে।

জবাবে তিনি মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আর কোনো উদ্যোগের প্রয়োজন নেই। বাজার এখন এমনিতেই ভালো হবে। সব শেয়ারের দাম অনেক পড়ে গেছে। সরকার বা কারও কোনো উদ্যোগে নয়, বাজার তার নিজম্ব শক্তিতেই ভালো হবে।”

শাকিল রিজভী বলেন, ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার এখনও বেশি। মানুষ কিন্তু ব্যাংকে ঠিকই টাকা রাখছে;পুঁজিবাজারে আনছে না। সে কারণে পুঁজিবাজারে নগদ টাকার অভাব দেখা দিয়েছে।

পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনে এমন কর্মসূচিতে আবার নামার ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা (ফাইল ছবি)

“বাজারে শেয়ারের দাম পড়তে পড়তে একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। আর কমবে না। এখন ঘুরে দাঁড়াবেই। যারা বাজার একটু বোঝে তারা এই সর্বনিম্ন প্রাইসে বিনিয়োগ করতে আসবেই। তখন অন্যরাও আসবে। তারল্য সংকট কেটে যাবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। বাজার ভালো হবে।

“পৃথিবীর অনেক বড় বড় পুঁজিবাজার একেবারে খাদের কিনারা থেকে উঠে এসে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে,”স্মরণ কয়ে দেন শাকীল রিজভী।

এতোদিন মূল্যসূচক অল্প অল্প পড়লেও এখন বড় পতন হচ্ছে পুঁজিবাজারে।

সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ে লেনদেন শুরু হয়। ঘণ্টাখানেক তা অব্যাহত থাকে। পরে পতনের ধারায় ফিরে আসে। শেষ পর্যন্ত ডিএসইএক্স ২৭ পয়েন্ট কমার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়।

অপর বাজার চট্টগ্রামেও একই অবস্থা লক্ষ করা গেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইএক্স ৩২ পয়েন্ট কমে। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার এই সূচক পড়ে ৭৫ পয়েন্ট। সোমবার পড়ে ৬২ পয়েন্ট।

চলতি বছরের শুরুতে ডিএসই’র প্রধান সূচক প্রায় ৬ হাজার পয়েন্টে উঠেছিল। বছরের শেষ ভাগে এসে সেই সূচক দেড় হাজার পয়েন্ট হারিয়ে ৪ হাজার ৫০০ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

বছরের শুরুতে দৈনিক লেনদেন ছিল ১ হাজার কোটি টাকার মতো। এখন লেনদেন হচ্ছে তিনশ কোটি টাকার মতো। কোনো কোনো দিন লেনদেন তিনশ কোটিরও নিচে নেমে যাচ্ছে।

সোমবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সেই সিদ্ধান্তের আলোকে মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরের সময় চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে ডিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

বাজার পরিস্থিতি

সপ্তাহের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ঢাকায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৫০৭ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ ১০পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে এক হাজার ১২ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ১৩ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৫৪৮ পয়েন্টে।

মঙ্গলবার ডিএসইতে ৩০৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সোমবার লেনদেনের অংক ছিল ২৭৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৬টির, কমেছে ২০৩টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৪টি কোম্পানির শেয়ার দর।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৪৫ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৩ হাজার ৬৮৩ পয়েন্টে।

২৫ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। সোমবার লেনদেন হয়েছিল ১৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

লেনদেন হয়েছে ২৩৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬০টির, কমেছে ১৪৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির দর।