রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২২০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬ শতাংশ।
ঢাকার বাজারে লেনদেন নেমে এসেছে ৩৪৯ কোটি টাকায়। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এ বাজারে ৪৩২ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার লেনেদন হয়েছিল।
সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। বৃহস্পতিবার এ বাজারে ২৫ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছিল।
পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহও ভালো যায়নি। পাঁচ দিনের লেনদেনের মধ্যে দুই দিন সূচক সামান্য বাড়লেও তিন দিন কমেছে। তার ধারাবাহিকতায় রোববার নতুন সপ্তাহ শুরু হয়েছে দর পতনের মধ্য দিয়ে।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে গতি সঞ্চার হয়েছিল সেটা এখন অনেকটাই অনুপস্থিত। আর শেয়ারবাজারে মন্দা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ-প্রণোদনার পরও পুঁজিবাজার চাঙ্গা হয়নি।
চলতি বছরের শুরুতে ডিএসই’র প্রধান সূচক প্রায় ৬ হাজার পয়েন্টে উঠেছিল। বছরের শেষ ভাগে এসে সেই সূচক প্রায় দেড় হাজার পয়েন্ট হারিয়ে ৪ হাজার ৬০০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে।
বছরের শুরুতে দৈনিক লেনদেন ছিল ১ হাজার কোটি টাকার মত। এখন লেনদেন হচ্ছে তিনশ থেকে চারশ কোটি টাকার মত। কোনো কোনো দিন লেনদেন তিনশ কোটিরও নিচে নেমে যাচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, রোববার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৩টির, কমেছে ২৭৩টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টি কোম্পানির শেয়ার দর।
ডিএসইএক্স বা প্রধান মূল্য সূচক ৭৫ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৫৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ১৪ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে এক হাজার ৪১ দশমিক ২৯ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ২২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৫৮৩ পয়েন্টে।
অন্যদিকে সিএসইতে প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২২০ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৩ হাজার ৯৮২ দশমিক ৭৫ পয়েন্টে।
লেনদেন হয়েছে ২৩৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৭টির, কমেছে ১৮৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টির দর।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির সব সূচকই এখন নেতিবাচক। রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। রাজস্ব আদায় কমছে। মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বমুখী। চাপে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। আমদানিও কমছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিনিয়োগে। প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার বিশাল অংকের খেলাপি ঋণ নিয়ে ডুবতে বসেছে ব্যাংক খাত।
“এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার ভালো হবে- এমন প্রত্যাশা বোধ হয় সমীচীন হবে না।”
“অর্থনীতির এখন খারাপ অবস্থায়। পুঁজিবাজারেও তার প্রভাব পড়ছে। তারল্য সংকট কাটছে না।”
রিজভী বলেন, তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানি কম লভ্যাংশ দিয়েছে, দুর্বল মুনাফা দেখিয়েছে। সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমছে। তার নেতিবাচক প্রভাবও বাজারে পড়ছে।
অর্থনীতির প্রভাব ছাড়াও পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট আছে বলে মনে করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের পুঁজিবাজারে সুশাসনের অভাব আছে। সে কারণে বাজারের থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা চলে যাচ্ছে।”
“আইসিবি ঠিকমত কাজ করছে না। বার বার বলেও ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনা যাচ্ছে না। সরকারি কোম্পানি বাজারে আসছে না। এভাবে একটা ভালো পুঁজিবাজার আমরা আশা করেতে পারি না।”
তবে আশা ছাড়ছেন না জানিয়ে রকিবুর রহমান বলেন, “আমি আশা করি সামনের দিনগুলোতে পুঁজিবাজার ভাল হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ভাল কাজ করছে; নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কাজ করছে। দুই স্টক এক্সচেঞ্জ নিজেদের জায়গা থেকে কাজ করছে। সব ঠিক থাকলে জানুয়ারি থেকে পুঁজিবাজার ভালো হতে পারে।”