শক্তিশালী বন্ড বাজার গড়ে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ জরুরি: বিএসইসি চেয়ারম্যান

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্য এখন একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট গড়ে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2019, 06:22 PM
Updated : 20 Nov 2019, 06:36 PM

বাংলাদেশে কীভাবে গ্রিন বন্ড বাজার সৃষ্টি করা যায় সে বিষয়ে বুধবার একটি সেমিনার আয়োজন করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। আগারগাঁওয়ে বিএসইসির নিজস্ব ভবনে এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন।

বাংলাদেশে গ্রিন বন্ডের বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বুধবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আয়োজিত সেমিনারে আলোচকবৃন্দ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সেমিনারে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে বন্ড মার্কেট একেবারেই ডেভেলপড না। আমাদের জিডিপি যে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে, আমরা যদি বন্ড মার্কেট ডেভলপ করতে না পারি পাশাপাশি গ্রিন বন্ড ডেভলপ করতে না পারি, তাহলে আমাদের এই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার থাকবে না।”

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে তার একটি বড় অংশ হচ্ছে সরকারি ব্যয় থেকে। কিন্তু বড় অংশ আসার কথা ছিল বেসরকারি খাত থেকে। সে বিনিয়োগ প্রায় ৭০ শতাংশ আমরা আশা করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেসরকারি বিনিয়োগ ২৫ শতাংশের বেশি হচ্ছে না।

“পৃথিবীতে যেসব দেশ অনেক উন্নত, যারা উন্নয়ন করেছে তাদের দেশে বন্ড মার্কেট অনেক উন্নত। বন্ড মার্কেট অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি শক্তিশালী মাধ্যম।”

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট দরকার বলে জানান তিনি।

খায়রুল হোসেন বলেন, “আমাদের দেশে বিনিয়োগকারীরা নিজেরাই বিনিয়োগ করেন যদিও শুধু শেয়ারের পুঁজিবাজারে একা একা বিনিয়োগ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু যদি বন্ড থাকত তাহলে ছোট বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির মাত্রা কমে যেত। কারণ তারা বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারত। বন্ড থেকে তারা বছর শেষে একটা ফিক্সড মুনাফা অর্জন করতে পারত, যেটা পুঁজিবাজারে শুধু শেয়ারে সম্ভব নয়।”

সেমিনারে বলা হয়, এই আলোচনার তথ্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে জানানো হবে গ্রিন বন্ড মার্কেট সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে।

গ্রিন বন্ড-এর মাধ্যমে একটি প্রক্রিয়ায় টাকা সংগ্রহ করা হয় এবং সেই টাকা পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়। এটার সাথে সাধারণ বন্ডের যে পার্থক্য থাকে তা হচ্ছে মূলত এর মুনাফায়। সাধারণ বন্ডের তুলনায় গ্রিন বন্ডে মুনাফা কিছুটা কম হয়ে থাকে।

সেমিনারে বিএসইসি চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

প্রথান অতিথির বক্তব্যে সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশে অনেক বড় পরিবেশের ঝুঁকির মধ্যে আছে। এ অবস্থায় আমাদের পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে এবং তার জন্য আমাদের অনেক অনেক টাকা লাগবে। সে টাকা আমাদের জোগাড় করতে হবে।

“আমরা যদি এই ধরনের টাকা গ্রিন বন্ডের মাধ্যমে জোগাড় করতে পারি তাহলে অবশ্যই সেটা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।”

আসাদুল ইসলাম বলেন, “গ্রিন বন্ডের মুনাফা সাধারণ বন্ডের তুলনায় কম বলে এ ধরনের বন্ডের ইস্যুয়ার এবং বিনিয়োগকারী সরকারি সংস্থাগুলো হলেই ভালো হয়। সরকারি সংস্থাগুলো এগিয়ে আসলে পরে বেসরকারি সংস্থাগুলো আস্তে আস্তে গ্রিন বন্ডের মাধ্যমে টাকা তুললে কার্যক্রম চালাতে সক্ষম হবে।

“এ ধরনের বন্ড প্রচলনের জন্য সরকারের সর্বমহল থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি আশা করি, বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট এবং গ্রিন বন্ড মার্কেট গড়ে উঠবে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক বড় অবদান রাখবে।”