পুঁজিবাজার নিয়ে আশার কথা শোনালেন দুই বিশ্লেষক

বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন দুই বাজার বিশ্লেষক শাকিল রিজভী এবং অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

ফারহান ফেরদৌসআবদুর রহিম হারমাছি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2019, 03:31 PM
Updated : 27 Feb 2020, 11:48 AM

শাকিল রিজভী বলেছেন, বাজারে যে টানা দরপতন হচ্ছিল সেটা আর হবে না। মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন পর বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্তকে পুঁজিবাজারের জন্য ‘সুখবর’ হিসেবে দেখছেন।

মন্দা এবং অস্থির পুঁজিবাজারে গত অক্টোবর মাসের ২২ দিনের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৬৫ পয়েন্ট বা ৫ শতাংশ হারিয়েছে। তবে রোববার নভেম্বর মাসের প্রথম লেনদেনে এই সূচক ৩০ পয়েন্টের মতো বেড়েছে।

বাজারের এই ঘুরে দাঁড়ানোকে ‘ইতিবাচক’ মন্তব্য করে ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারে টানা যে দরপতন হচ্ছিল, সেটা আপাতত বন্ধ হয়েছে। এখন আর ক্রমাগত পতন হবে না। বাড়বে-কমবে এমনটা হবে।”

“ভয় পেয়ে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছিল।সে কারণে সূচকের পতন হচ্ছিল।সেটি এখন বন্ধ হবে।”

শাকিল রিজভী

কেনো এমনটা মনে করছেন- এ প্রশ্নের উত্তরে শাকিল বলেন, “তারল্য সংকটের পাশাপাশি যে সব কোম্পানির বছর জুন মাসে শেষ হয়েছে তারা যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল সেগুলো খারাপ ছিল। অর্থাৎ ঔ কোম্পানিগুলো শেয়ারহোল্ডারদের ভালো লভ্যাংশ দেয়নি। সে কারণে পুঁজিবাজারে প্রায় টানা দরপতন হয়েছে।”

“যেহেতু জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর ঘোষণা শেষ হয়ে গেছে।এখন ডিসেম্বরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্য কোম্পানির হিসাব বছর শেষ হবে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে সেগুলোর  লভ্যাংশ ঘোষণা আসবে। তার আগে পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের সম্ভাবনা নেই।”

“এখন আর আগের মত সূচক কমার সম্ভাবনা নেই; ৫০ পয়েন্ট বাড়বে, ২০ পয়েন্ট কমবে- এভাবেই হয়তো সূচক ইতিবাচক ধারার দিকে যাবে। যে সব কোম্পানির শেয়ারের দাম একটু বেশি বেড়েছিল সেগুলো কিন্তু কমে এখন সঠিক অবস্থায় এসেছে। এই অবস্থা থেকে আরও নিচের দিকে নামার সম্ভাবনা একবারেই কম। অন্য কোম্পানির দর কমতে কমতে একেবারে নিচে নেমে এসেছে।”

“দেখে-শুনে এই বাজারে শেয়ার কিনলে ভালো মুনাফা আসবে। বিনিয়োগকারীরা সেই সুযোগটা নিতে বাজারমুখি হবেন বলে আমার মনে হয়।”

অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) উদ্বৃত্ত হওয়া বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের জন্য ‘একটি সুখবর’ বলে মনে করছেন আরেক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

অধ্যাপক মিজানুর রহমান

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স) ঘাটতি (ঋণাত্মক) ছিল।এটিকে তারল্য সংকটের একটি পরিমাপক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পুঁজিবাজারে যে দরপতন তার একটি কারণ ছিল এই তারল্য সংকট।

চলতি হিসাবের ভারসাম্য উদ্বৃত্ত হওয়ায় বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা-এ প্রশ্নের উত্তরে মিজানুর রহমান বলেন, “এর ইতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়তে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। এটা ছয় মাসের আগে বলা যাবে না। তবে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স পজিটিভ হওয়া পুঁজিবাজারের জন্য একটি সুখবর।”

আমদানি কমায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ; যা অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব হবে কিনা- তা নিয়ে সংশ্রয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরের এই দুই মাসে উদ্বৃত্তের বদলে এই সূচকে ৭০ লাখ ডলার ঘাটতি (ঋণাত্মক) ছিল।

চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বড় ঘাটতি (ঋণাত্মক) নিয়ে শেষ হয়েছিল গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর।

বাজার পরিস্থিতি

সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৯ পয়েন্টের বেশি। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৭৯ পয়েন্টের মতো।

তবে দুই বাজারেই লেনদেন কমেছে।ঢাকায় লেনদেন হয়েছে ৩২৬ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪০৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

সিএসইতে রোববার ১৫ কোটি ২২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনরদেনের অংক ছিল ১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

ডিএসইএক্স বা প্রধান সূচক ২৯ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৭১২ দশমিক ০৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৭ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে এক হাজার ৮৩ দশমিক ১৭ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ১০ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বেড়ে  অবস্থান করছে ১ হাজার ৬৩৮ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে।

ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৫১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৯০টির, কমেছে ১২৩টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৮টির দর।

সিএসইতে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৮ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৪ হাজার ৩০০ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে। ।

লেনদেনে অংশ নিয়েছে ২৫১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৪টির, কমেছে ৬৩টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টির দর।