দশটি ইউনিটের প্রত্যেকটির দর এখন পাঁচ টাকারও নিচে। কোনো কোনোটির দাম চার টাকারও কম।
ঢাকার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ড আছে ৩৭টি। এর মধ্যে ১০টির সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আছে রেইস। এই ফান্ডগুলো যখন পুঁজিবাজারে এসেছিল, প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য ছিল ১০ টাকা করে।
বিনিয়োগকারীরা লাভের আশায় বিনিয়োগ করলেও এখন উল্টো তাদের হাতে থাকা ইউনিটের দর অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। বাজারে থাকা বাকি ২৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কোনোটির ইউনিট প্রতি দাম ৫ টাকার নিচে নামেনি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এই খারাপ অবস্থার জন্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অপব্যবস্থাপনা দায়ী। তারা বিনিয়োগকারীদের কথা না ভেবে উল্টা-পাল্টা বিনিয়োগ করেছে। আর যারা এ ধরনের বিনিয়োগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৩৯ পয়সা; শেষ লেনদেন হয়েছে ৪ টাকায়।
আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৩০ পয়সা; লেনদেন হচ্ছে ৩ টাকা ৯০ পয়সায়।
ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৩২ পয়সা; লেনদেন হয়েছে ৪ টাকায়।
পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৩৬ পয়সা; মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৩ টাকা ৯০ পয়সায়।
পিএইচপি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ২৯ পয়সা; লেনদেন হয়েছে ৩ টাকা ৯০ পয়সায়।
ইবিএল এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ২৮ পয়সা; শেষ লেনদেন হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সায়।
এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৫৩ পয়সা; লেনদেন হয়েছে ৩ টাকা ৯০ পয়সায়।
ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৪০ পয়সা; লেনদেন হয়েছে ৩ টাকা ৯০ পয়সায়।
এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভি ১০ টাকা ৩১ পয়সা; লেনদেন হয়েছে ৪ টাকা ৩০ পয়সায়।
ছোট বিনিয়োগকারীদের সংগঠন পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অব্যবস্থাপনার কারণে বিনিয়োগকারীরা ফান্ডের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছে। কেউ এখন আর মিউচ্যুয়াল ফান্ড কিনতে চায় না।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সায়ীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সব মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা শেষ। এখন কেউ মিউচ্যুয়াল ফান্ড কিনবে না, ফলে চাহিদা কম।
“পুঁজিবাজারের অবস্থা খারাপ, প্রতিদিন শেয়ারের দাম কমছে। এ অবস্থায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্যও (এনএভি) কমছে। তাই দাম কমে যাচ্ছে।”
ইয়াওয়ার সায়ীদ বলেন, যদি কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এনএভির চেয়ে বাজার মূল্য কম হয়, তাহলে দুটি বিষয় হতে পারে।
“এক, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম অযৌক্তিক ভাবে কম হতে পারে। অথবা হতে পারে যে ওই মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের সাথে ভাল আচরণ করেনি, অর্থাৎ ভাল মুনাফা দেয়নি। হয়ত মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ভাল ছিল না।”
বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি দেশের পুঁজিবাজারে যত বেশি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থাকবে সেই দেশের পুঁজিবাজার তত বেশি স্থিতিশীল হবে। বাংলাদেশে ঘটছে তার উল্টো।
রেইস অ্যাসেট ম্যানজেমেন্ট কোম্পানি যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। রেইস গ্রপের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত পদ্মা ব্যাংকেরও (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) চেয়ারম্যান।
ফারমার্স ব্যাংকে আগে থেকেই রেইসের বিনিয়োগ ছিল। ঋণ কেলেঙ্কারিতে ফারমার্স ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পর চৌধুরী নাফিজ সারাফাত এর চেয়ারম্যান হন। পরে ব্যাংকের নাম বদলে হয় পদ্মা ব্যাংক।
রেইসের দশটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর ৫ টাকার নিচে নেমে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে মঙ্গলবার নাফিজ সারাফাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়গুলো আমি দেখি না। আমার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন।”
পুরনো খবর