ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডে কারসাজির সন্দেহ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডে বড় ধরনের কারসাজির সন্দেহ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় অভিযোগ জমা পড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2019, 05:30 PM
Updated : 26 Sept 2019, 01:07 PM

একটি গোষ্ঠী হঠাৎ করেই এই ফান্ডটির বিপুল পরিমাণ ইউনিট কিনে বাজারে চাহিদা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে কারসাজি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের (এলআর গ্লোবাল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজ ইসলাম।

তার আশঙ্কা, এই গোষ্ঠী ফান্ডটির এতটাই ইউনিট সংগ্রহ করেছে যে তারা চাইলে নিজেরাই এই মিউচুয়াল ফান্ডের দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যেতে পারে।

তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এলআর গ্লোবাল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসি এবং প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেকে (সিএসই) আহ্বান জানিয়েছে।

তবে অভিযোগের মুখে থাকা সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইডিজিই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী আলী ইমাম বলছেন, তারা বেআইনি কিছু করেননি, আর কারসাজির অভিযোগও ঠিক নয়।

রিয়াজ সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শেয়ারটি নিয়ে কারসাজির পাশাপাশি এই ‘ক্লোজ এন্ড’ মিউচুয়াল ফান্ডকে ‘ওপেন এন্ড’ মিউচুয়াল ফান্ডে পরিবর্তন করতে চাচ্ছে, যা বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই ক্ষতি হবে।”

ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড একটি ‘ক্লোজ এন্ড’ মিউচুয়াল ফান্ড। মানে এটির মেয়াদ এবং বিনিয়োগের পরিমাণ অপরিবর্তিত। এটি ‘ওপেন এন্ড’ মিউচুয়াল ফান্ডের বিপরীত।

সম্প্রতি ফান্ডটির সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের আবেদনে ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছর থেকে ২০ বছর করেছে বিএসইসি। তবে এটাকে ‘ক্লোজ এন্ড’ই রাখা হয়েছে।

আর এই ফান্ডকে ‘ক্লোজ এন্ড’ থেকে ‘ওপেন এন্ডে’ পরিবর্তন করার জন্য আবেদন করেছেন এই ইউনিটের বড় অংশীদাররা, যাদের বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ করেছে এলআর গ্লোবাল।

এই অংশীদারদের একজন ইডিজিই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী আলী ইমাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারী। দেশের পুঁজিবাজর এবং নিজেদের মুনাফার কথা চিন্তা করেই এই আবেদন করেছি।”

এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশে অন্যতম বড় সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান। তারা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যবস্থাপনায় যুক্ত।

ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপকও এলআর গ্লোবাল। এই ফান্ডের আকার প্রায় ১২০ কোটি টাকা। ফান্ডটি পুঁজিবাজারে আসে ২০১০ সালে । 

ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর পরে ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টির কাছে একটি চিঠি আসে। যেখানে ফান্ডটিকে ‘ওপেন এন্ড’ করার ব্যপারে আবেদন করা হয়।       

নিয়ম অনুয়ায়ী এই আবেদন করতে হলে ফান্ডটির ৪ ভাগের তিন ভাগ মালিক একত্রিত হয়ে এই আবেদন করতে হয়।

এলআর গ্লোবালের যত অভিযোগ

এলআর গ্লোবাল বিএসইসি এবং ডিএসই ও সিএসই’র কাছে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ইডিজিই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট গত ১৭ মাসে ফান্ডটির প্রায় ৫০ লাখ নতুন ইউনিট কিনেছে।

২০১৮ সালের ৩০ মার্চে ইডিজিই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এবং তার মালিক পক্ষ ১০টি বিও একাউন্টের মাধ্যমে ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ৩৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৫ টি ইউনিট ধারণ করছিল।     

২০১৯ সালের ৩০ অগাস্ট ইডিজিই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এবং তার মালিক পক্ষ ১৫টি বিও একাউন্টের মাধ্যমে এই ফান্ডের প্রায় ৮৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৯৮টি ইউনিট ধারণ করেছে।

এলআর গ্লোবাল বলেছে, এই ১৫টি বিও অ্যাকাউন্ট ইডিজিই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, তার মালিক এবং মালিকের আত্মীয়-স্বজনদের।

অভিযোগে বিও একাউন্ট হোল্ডার সবার নাম এবং এবং মালিকের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিবরণও দিয়েছে এলআর গ্লোবাল।

তারা বলছে, তারা গত ১২ মাসে ১০০ জন বড় ইউনিট হোল্ডারের তথ্য সিডিবিএল থেকে সংগ্রহ করে গবেষণা করে এসব তথ্য পেয়েছেন তারা।

এই সম্পদ ব্যবস্থাপক বলছে, অভিযুক্ত সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান ইডিজিই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এই ১৫ থেকে ১৮টি বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কিনে এর জোগান কমিয়ে দিয়েছেন।

এলআর গ্লোবাল সন্দেহ করছে, ইডিজিই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে।

তারা পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখেছে, গত ১২ মাসে এই  ফান্ডে যত লেনদেন হয়েছে, তার ৫৮ শতাংশ করেছে ইডিজিই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট।

গত শেষ তিন মাসে হঠাৎ করে এই মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন বেড়ে গেছে। এই ধরনের লেনদেন এর আগে এই ফান্ডে হয়নি।

এলআর গ্লোবাল মনে করছে, এই প্রক্রিয়ায় ইডিজিই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট এবং তার সঙ্গে জড়িতরা ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের অনেক বড় অংশ সংগ্রহ করেছে।

এলআর গ্লোবাল মনে করে, সামনের দিনগুলোতে এই ফান্ড দিয়ে কারসাজি করতে পারে। তাই এখনই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

অভিযোগ অস্বীকার

 

এ অভিযোগের বিষয়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইডিজিই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী আলী ইমামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই অভিযোগ ঠিক নয়।

“আমরা ১২ টাকায় প্রথম ইউনিট কিনেছি। এর পরে যখন দাম কমেছে, আমরা গড় দাম কমানোর জন্য আরও শেয়ার কিনেছি।”

“আর এই ইউনিট আমাদের কাছে কম দামে আরও বেশি বিনিয়োগযোগ্য মনে হয়েছে। তাই আমরা এর হোল্ডিং বাড়িয়েছি,” বলেন তিনি।

আলী ইমাম বলেন, “আমরা কিন্তু বিনিয়োগ করেছি। আমাদের কোনো কারসাজির পরিকল্পনা নেই। সবচেয়ে বড় কথা ১২ কোটি ইউনিটের মধ্যে আমরা যদি মাত্র ৮৩ লাখ ইউনিট কিনেও থাকি তা দিয়ে কারসাজি করা সম্ভব নয়।

“কোনো মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা নিশ্চয় বেআইনি নয়। আর মাত্র ৬ শতাংশ শেয়ার দিয়ে কারসাজি করা সম্ভব নয়।”

“অভিযোগ সঠিক নয়, যৌক্তিক নয়,“ বলেন আলী ইমাম।