বিএসইসি পুনর্গঠনসহ ১৫ দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ সব কমিশনারকে অপসারণ করে কমিশন পুনর্গঠন এবং ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে যাওয়া শেয়ারগুলো নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদকে ওই দামে কিনতে বাধ্য করার জন্য আইন পাসসহ ১৫ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ছোট বিনিয়োগকারীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2019, 02:38 PM
Updated : 18 July 2019, 03:00 PM

বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে মতিঝিল ডিএসই ভবনের সামনে থেকে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে একটি মিছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে।

কাকরাইল মোড়ে আসার মিছিল থেকে ১৫ জনের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিকেল সাড়ে ৫ টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের যাই। সেখানে রিসিপশনে আমাদের স্মারকলিপি জমা দেই। ৬টা ২০ মিনিটে সেখান থেকে বের হয়ে আসি।

“আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। আমাদের বলা হয়েছে ঈদের পরে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের ডাকবেন। প্রধানমন্ত্রী কালকে বিদেশে যাবেন। আজকে মিটিং ছিল তাই দেখা করতে পারেন নাই।”

পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইতে তার কাছে ১৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে বলে জানান আব্দুর রাজ্জাক।

পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরেই মতিঝিলে মিছিল-মানববন্ধন করেছে ছোট বিনিয়োগকারীরা। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় তারা বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

ঐক্য পরিষদের ১৫ দফা:

>> ইস্যু মূল্যের নিচে অবস্থান করা শেয়ারগুলো নিজ নিজ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে ইস্যু মূল্যে শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে। আর সেজন্য বাইব্যাক আইন পাস করতে হবে।

>> ২ সিসি আইনের বাস্তবায়ন করতে যে সকল কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ব্যক্তিগত ২ শতাংশ, সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই, সে সব উদ্যোক্তা পরিচালক ও কোম্পানিগুলোকে শেয়ার ধারণ কতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

>> প্লেসমেন্ট শেয়ারের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে এবং প্লেসমেন্ট শেয়ারের লকইন পিরিয়ড ৫ বছর করতে হবে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার আইপিও, রাইট শেয়ার অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

>> খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী শেয়ারবাজার কারসাজির সাথে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

>> জেড ক্যাটাগরি এবং ওটিসি মার্কেট বলতে কোন মার্কেট থাকতে পারবে না। কোম্পানি আইনে কোথাও জেড ক্যাটাগরির এবং ওটিসি মার্কেটের উল্লেখ নেই।

>> পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫ বাতিল করতে হবে।

>> পুঁজিবাজারের প্রাণ মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে পুঁজিবাজারে সক্রিয় হতে বাধ্য করতে হবে এবং প্রত্যেক ফান্ডের নূন্যতম ৮০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে।

>> সাধারণ বিনিয়োগকারী আইপিও কোটা ৮০ শতাংশ করতে হবে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ প্রদান করতে হবে।

>> ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মার্জিন লোনের সুদ সম্পূর্ণ মওকুফ করতে হবে।

>> পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধির জন্য সহজশর্তে অর্থাৎ ৩ শতাংশ সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। যা আইসিবি, বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে ৫ শতাংশ হারে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোন হিসাবে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।

>> অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা শর্তে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে।

>> জীবন বীমা খাতের বিপুল অলস ও সঞ্চিত অর্থের ৪০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাধ্য করতে হবে।

>> জীবন বাচাতে এবং ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার মামলা প্রত্যাহার ও পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

>> ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিপরীতে বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জ নামে বিকল্প স্টক এক্সচেঞ্জ করতে হবে; এর ফলে কারসাজি বন্ধ হবে।

>> পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিশনারদের অপসারণ করে কমিশন পুন:গঠন করতে হবে।