আয়ের পুরোটা পুঁজিবাজারে না ঢালার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

বেশি মুনাফার আশায় পুঁজিবাজার থেকে আয়ের পুরোটাই ফের বিনিয়োগ না করতে বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2019, 10:03 AM
Updated : 8 July 2019, 11:12 AM

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘রিজিওনাল সেমিনার অন ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট প্রোটেকশন’ শীর্ষক চারদিনের আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই সেমিনারে জাপান, নেপাল, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্সসহ নয়টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।

বিভিন্ন দেশে কিভাবে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় তা নিয়ে সেমিনারে মতবিনিময় হবে।

বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তাদের সচেতন হওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।

“বিনিয়োগকারীরাই হল বাজারের মূল চালিকাশক্তি। তাই তাদের সচেতনতার বিষয়টি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম পূর্বশর্ত। জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করলে একদিকে যেমন প্রত্যেকের বিনিয়োগ ঝুঁকি মোকবেলার সক্ষমতা বাড়ে, অন্যদিকে নিশ্চিত হয় পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা।”

তিনি বলেন, “যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন তাদের কাছে একটা অনুরোধ করব, আপনারা যখন বিনিয়োগ করতে যান, যে টাকা উপার্জন করেন তার সবটুকু খরচ করে ফেলবেন না। কিছু টাকা জমা রেখে তারপর খরচ করবেন।

“কারণ অনেক সময় দেখা যায় যে যতটুকু পাওয়া গেল আরও বেশি পাওয়ার লোভে সবটুকুই খরচ করে ফেললে শূন্য হয়ে যেতে হয়। সেটা যেন না হয়। এজন্য যাই উপার্জন করেন, কিছু হাতে রাখবেন, জমা রাখবেন। কিছু খরচ করবেন। তাহলেই আমার মনে হয় আপনাদের আয় স্থিতিশীল থাকবে।”

এ বছরের প্রথম ভাগে পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনে বিনিয়োগকারীদের অসন্তোষের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী সংসদে কথা বলেছিলেন। সে সময় পুঁজিবাজার ঠিক করতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।     

সোমবারের অনুষ্ঠানেও শেখ হাসিনা পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে সরকারের উদ্যোগী হওয়ার কথা বলেন।

“দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী অর্থের যোগান দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে কাজ করে যাচ্ছে।

“একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলার জন্য ধারাবাহিকভাবে পলিসি সাপোর্ট, আইনগত সংস্কার, অবকাঠামো র্নিমাণসহ নানাবিধ সহযোগিতা দিয়ে আসছে সরকার।পুঁজিবাজারের বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম দূর করে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা হয়েছে।”

বিএসইসির সক্ষমতা বাড়াতে জনবল বাড়ানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। শিল্পায়নও আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা দেশে শিল্পায়নের মাধ্যমে অধিক হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এটা করা সম্ভব।

“এই শিল্পায়নের জন্য দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগেরও প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি পুঁজিবাজারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ও বিনিয়োগে অংশীদার করা সম্ভব। ফলে যত বেশি মানুষ পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত হবে, আমাদের শিল্পায়ন তত বেশি তরান্বিত হবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের দেশের পুঁজিবাজার এখনও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীর ওপর নির্ভরশীল।শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনের জন্য দৈনন্দিন লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পরিমাণ বৃদ্ধি করা উচিত। একটি জ্ঞাননির্ভর বিনিয়োগকারী গোষ্ঠি গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।”

অনুষ্ঠানে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি মনমোহন পারকাশ এবং বিএসইসি চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।