এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি সব ধরনের কোম্পানির নিরীক্ষা কাজের যোগ্যতা হারিয়েছে।
বৃহস্পতিবার আইসিএবির এক জরুরি কাউন্সিল সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সভাপতি এ এফ নেছার উদ্দিন।
“কিন্তু তারা আমাদেরকে এ বিষয়ে কোন সহযোগিতা করেনি। যেহেতু আমরা তাদের কাছে কোন সহযোগিতা পাইনি। প্রাইমারি রেগুলেটর হিসেবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।
“আমরা তাদের লাইসেন্স নবায়ন করিনি। এর ফলে তারা এখন আর তালিকাভুক্ত বা অতালিকাভুক্ত কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান অডিট করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল।”
তিনি জানান, কপারটেক ইস্যুতে আইসিএবির রিভিউ কাজে সহযোগিতা করেনি আহমেদ অ্যান্ড আক্তার কর্তৃপক্ষ। আইসিএবির পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে রিভিউয়ের জন্য ৪ দফায় চিঠি দেওয়া হলেও ‘ওয়ার্কিং পেপার’ দিয়ে সহযোগিতা করেনি।
“এক্ষেত্রে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একেকবার একেকরকম অজুহাত দেখানো হয়েছে। যা আইসিএবির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। সে কারনে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রাকটিসিং লাইসেন্স নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।”
এমন ঘটনা আইসিএবির ইতিহাসে প্রথমবার ঘটল বলে জানান নেছার উদ্দিন।
আইসিএবির সভাপতি বলেন, আহমেদ অ্যান্ড আক্তারের লাইসেন্স নবায়ন না করার বিষয়টি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন -বিএসইসি, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল-এফআরসি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ- সিএসই) এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
কপারটেকের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে এখন কি হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে নেছার উদ্দিন বলেন,“এখন যদি বিএসইসি মনে করে তবে অভিযোগ গুলোর বিষয়ে আবার রি-অডিট করাতে পারে। আগে কিন্তু এ ধরনের অভিযোগের রি-অডিট হত।”
এদিকে কপারটেক ইস্যুতে আইসিএবি সভাপতি নেছার উদ্দিনকে ডেকেছেন এফআরসির চেয়ারম্যান সি কিউ কে মোস্তাক আহমেদ।
রোববার আইসিএবি সভাপতি এবং এফআরসি চেয়ারম্যানের মধ্যে বৈঠক হবে বলে দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাদেরকে কোনভাবেই ডিএসইতে লেনদেনের জন্য তালিকাভুক্ত করা উচিত্ হবে না।বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই এটা করা উচিৎ।”
কোনো কোম্পানি যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে অথবা ইচ্ছে করে ভুল হিসাব দেখিয়ে পুঁজিবাজারে আসে, তাহলে তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার কোনো আইন আগে ছিল না। এই অবস্থায় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ফাইনানশিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট জাতীয় সংসদে পাস হয়।
এরপর হিসাব নিরীক্ষকদের ভুল-ত্রুটি দেখভাল করে তাদের ঠিকঠাক রাখার জন্য ওই আইনের আওতায় গঠন করা হয় ফাইনানশিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল-এফআরসি।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কপারটেকের আইপিও অনুমোদন দেওয়ার পর বাজার থেকে ২০ কোটি টাকা তুলে নেয় কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। কিন্তু ডিএসই তালিকাভুক্ত না করায় প্রযুক্তি খাতের এ কোম্পানি লেনদেনে যেতে পারছে না।
গত বছর ডিসেম্বরে আইপিও অনুমোদন পাওয়ার পর সিএসইতে তালিকাভুক্ত হয় কপারটেক। কিন্তু প্রসপেক্টাসে দেওয়া তথ্যে অসঙ্গতি থাকার অভিযোগ উঠায় ঢাকার বাজারে তাদের তালিকাভুক্তি আটকে যায়।
আগেও অনেক কোম্পানি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আইপিও অনুমোদন নিয়ে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বাজার থেকে টাকা তুলে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে। সে কারণে কপারটেকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখতে আইসিএবিকে নির্দেশ দিয়েছিল এফআরসি।
এর আগে ২ জুলাই আহমেদ অ্যান্ড আক্তারকে পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত কোম্পানির নিরীক্ষা কাজে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিএসইসি।
বিএসইসি জানায়, আহমেদ অ্যান্ড আক্তারের পার্টনার শাহেদ মোহাম্মদ অবসরের কারণে নীরিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পার্টনারশিপ থেকে প্রোপ্রাইটরশিপে পরিণত হয়েছে। এর মাধ্যমে আহমেদ অ্যান্ড আক্তার শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আর্থিক হিসাব নিরীক্ষার যোগ্যতা হারিয়েছে।