একটি ‘বিতর্কিত’ প্রস্তাবে দরপতন পুঁজিবাজারে

প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের পরও একটি ‘বিতর্কিত’ প্রস্তাবে দরপতন হচ্ছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2019, 11:57 AM
Updated : 17 June 2019, 11:57 AM

অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেছেন।

সেই বাজেটে নগদ লভ্যাংশ ৫০ হাজার টাকার কম হলে কর মাফ, নগদ লভ্যাংশকে উৎসাহিত করতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্টক লভ্যাংশ বিতরণের উপর ১৫ শতাংশ কর আরোপসহ বাজারের জন্য আরও কিছু ইতিবাচক ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

সবাই প্রত্যাশা করেছিল এ সব পদক্ষেপের কারণে বাজার ভালো হবে। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো।

বাজেটের ঘোষণার পর দুই দিন লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে। এই দুই দিনে প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে প্রায় ১০০ পয়েন্ট। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৭৫ পয়েন্ট।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজার ভালো করতে প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ভালো প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু একটি বিতর্কিত প্রস্তাবে সবাই হতবাক হয়েছে।

বাজেট প্রস্তাবে কোনো কোম্পানির কোনো আয় বছরে রিটেইনড আর্নিংস, রিজার্ভ ইত্যাদির সমষ্টি যদি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হয় তাহলে যতটুকু বেশি হবে তার ওপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই প্রস্তাব পাশ হলে ভালো কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর এ কারণেই বাজারে দরপতন হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ধারণা এই প্রস্তাব বাজেটে ভুলভাবে উপস্থাপন হয়েছে। সবদিক দিয়ে পুঁজিবাজার সহায়ক এই বাজেটে এ ধরনের বিতর্কিত প্রস্তাব কোনভাবেই কাম্য নয়।”

শাকিল রিজভী (ফাইল ছবি)

তিনি বলেন, “ট্যাক্স দেয়ার পরেই কোম্পানির অর্থ রিজার্ভে নেয়া হয়। সুতরাং আবার ট্যাক্স দিলে দ্বৈত ট্যাক্স হয়ে যাবে। তাছাড়া কোন কোম্পানির রিজার্ভ ক্যাশ ফর্মে নেই। তাহলে ট্যাক্স কিভাবে দেবে? এতে ভালো কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবে।”

বাজেট পাশের সময় অর্থমন্ত্রী এই বিতর্কিত প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আশা করেন শাকিল রিজভি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন,“ বাজেট প্রস্তাবে এই ঘোষণা একটি মৌলিক ভুল হয়েছে। কোন জাতীয় বাজেটে এই ধরনের প্রস্তাবনা আসাটা খুবই আবাক কারার মত ব্যপার। ”

“এই ধরনের প্রস্তাব ব্যবসায়ের বিনিয়োগকে বাধা গ্রস্থ করবে। এটি তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির মুনাফায় বিরুপ প্রভাব ফেলবে ।যে সব কোম্পানি ভাল ভাবে কর দিয়ে থাকে তাদের এই নীতি ক্ষতির মধ্যে ফেলবে।”

সোমবারের বাজার পরিস্থিতি

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাজেট ঘোষণার পর দ্বিতীয় দিনের লেনদেনে ডিএসইর) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৫৫ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট, সূচক অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৭৫ দশমিক ২৯ পয়েন্টে ।

অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৩৫ দশমিক ৬২ পয়েন্ট।

সোমবার ঢাকায় ৫৩৫ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। রোববার এই বাজারে ৫৩৪ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

সোমবার সিএসইতে ৩৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। রোববার লেনদেনের অংক ছিল ২৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৫৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৭ টির, কমেছে ২৩৫ টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১টির দর।

ডিএসইএক্স বা প্রধান সূচক ৫৫ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৭৫ দশমিক ২৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১১ দশমিক ৪১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে এক হাজার ২২৩ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ১৫ দশমিক ৭০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৮৯ পয়েন্টে।

সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৩৫ দশমিক ৬২ পয়েন্ট; সূচক হয়েছে ১৬ হাজার ৪৮৮ পয়েন্ট।

লেনদেনে অংশ নিয়েছে ২৭০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৯ টির, কমেছে ১৮০ টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির দর।