শেয়ার বাজারে বিএটিবিসির দিন

ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো ৭০০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করার পর ঢাকার পুঁজিবাজারে এ কোম্পানির শেয়ার গত বিশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2019, 02:57 PM
Updated : 12 March 2019, 02:57 PM

তামাক পণ্য প্রস্তুতকারী এ কোম্পানির শেয়ারের দাম মঙ্গলবার ১৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৫৮০ টাকা। বিএটিবিসির শেয়ার দরে এক দিনে এত বড় লাফ গত দশ বছরে আর দেখা যায়নি।

মঙ্গলবারের লেনদেনে বিএটিবিসির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৩০ টাকা ৫০ পয়সা। সেই সঙ্গে কোম্পানিটির বাজার মূলধন এক লাফে বেড়েছে ৩ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।

ফলে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর মোট বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকায়। বাজার মূলধনের দিক দিয়ে ডিএসইতে গ্রামীণফোনের পরেই এখন বিএটিবিসির অবস্থান।

২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫০০ শতাংশ নগদ এবং ২০০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিচ্ছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো।

এ খবরে মঙ্গলবার বিএটিবিসির শেয়ারের লেনদেন শুরুই হয় আগের দিনের চেয়ে ১১৫০ টাকা ৫০ পয়সা বেশি দাম নিয়ে। এরপর দাম চড়তে চড়তে এক পর্যায়ে ৫ হাজার ৫০০ টাকায় উঠে যায়। এরপর ওঠানামার মধ্য দিয়ে সমন্বয় হয়ে দিন শেষ হয় ৪ হাজার ৫৮০ টাকায়।

একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মূলত দীর্ঘদিন পর স্টক লভ্যাংশ দেওয়া এবং কোম্পানির আয়ে প্রবৃদ্ধির কারণেই বিএটিবিসির শেয়ার দরে এই উল্লম্ফন।

১৯৯৩ সালের পর এই প্রথম স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশে তামাক ব্যবসার শীর্ষ এ কোম্পানি। ২০০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ডের খবর অকেটাই আশাতীত ছিল বিনিয়োগকারীদের কাছে।

সোমবারের পর্ষদ সভায় এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৬০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৫৪০ কোটি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত দুই বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বিএটিবিসির বার্ষিক আয়ের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

২০১৮ সালে বিএটিবিসি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারে আয় করেছে ১৬৬ টাকা ৮৭ পয়সা। আগের বছর এ আয় ছিল ১৩০ টাকা ৫০ পয়সা।

বহুজাতিক এ কোম্পানির ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের হাতে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১৬ দশমিক ০১ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার ধারণা করেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে মাত্র দশমিক ৬৮ শতাংশ শেয়ার।

একজন বাজার বিশ্লেষক বলছেন, স্বল্প পরিমাণ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকায় বিক্রির চাপ সামান্য বাড়লেই বিএটিবিসির শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে।

ক্রেতার চাপে মঙ্গলবার বিএটিবিসির টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর আরএসআই (রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইনডেক্স) ৯১তে পৌঁছেছে। সাধারণত আরএসআই ৭০ এর বেশি হলেই তাকে ‘অতি ক্রয়ের চাপ’ হিসেবে দেখা হয় এবং বিনিয়োগের জন্য ওই শেয়ার আর ‘নিরাপদ নয়’ বলে মনে করা হয়।

দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিএটিবিসির শেয়ারের সরবরাহও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫৯ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে এদিন; যার মূল্য ৭৫ কোটি টাকার বেশি।

গত ২০ দিনের গড় লেনদেনের তুলনায় এদিন ৬০ গুণ বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সারাদিনই লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করেছে বিএটিবিসি।

ক্রেতার চাপ থাকলেও এদিন টেকনিক্যাল ইনডিকেটরে শেয়ার অধিগ্রহণের চেয়ে সরবরাহ ছিল বেশি। যার মানে হল, ক্রেতার চাপের আড়ালে প্রচুর শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে।

২০১৭ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিএটিবিসির স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা দেড় হাজার, অস্থায়ী কর্মী ৫০ হাজার। এছাড়া কৃষক, সরবরাহকারী ও পরিবেশক রয়েছে ১৩ লাখ।

১৯৭৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ তামাক কোম্পানি ২০১৭ সালে সরকারকে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে।