ব্যাংকের শেয়ারের দর চড়ছে

দীর্ঘদিন পর নড়েচড়ে উঠেছে ব্যাংক খাতের শেয়ার। এতোদিন দু-একটি শেয়ারের দাম বাড়ার চিত্র দেখা গেলেও সর্বশেষ লেনদেন চিত্র বলছে- ‘চাঙা হচ্ছে ব্যাংক খাতের শেয়ার’।

ফারহান ফেরদৌসআবদুর রহিম হারমাছি ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2019, 03:18 PM
Updated : 20 Jan 2019, 03:18 PM

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভূক্ত সবগুলো শেয়ারের দরই বেড়েছে রোববার। শীর্ষ দশেও উঠে এসেছে কয়েকটি ।

‘স্বস্তির’ বাজারে ব্যাংকগুলো ভালো লভ্যাংশ দেবে- এমন প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক খাতের দিকে ঝুঁকছেন বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, ব্যাংকিংগুলোর অর্থবছর শেষ হয়েছে ডিসেম্বরে। আর কয়েক দিন পর থেকেই লভ্যাংশ ঘোষণা শুরু করবে তারা।এই লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ব্যাংক খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে।

স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুবাদে ব্যাংকগুলোর মুনাফা বেড়েছে। ২০১৭ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে বেশি লভ্যাংশ দেবে- এমনটা ভেবে সবাই ব্যাংকের শেয়ারের দিকে ঝুঁকেছে। আর সে কারণেই দীর্ঘদিন পর ব্যাংক খাতের শেয়ারের দর বাড়ছে বলে জানান এই বাজার বিশ্লেষক।

২০১০ সালে ধসের পর বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমতে কমতে অভিহিত মূল্যের (১০ টাকা) কাছাকাছি নেমে এসেছিল। কয়েকটির দর ১০ টাকার নীচেও নেমে গিয়েছিল।

মাঝে-মধ্যে কিছু ব্যাংকের শেয়ারের দর বাড়লেও অধিকাংশের দর দিল অভিহিত মূল্যের কাছঅকাছি অথবা নীচে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোটের পর তেজিভাবে আরেকটি সপ্তাহ শুরু করলো বাংলাদেশের পুঁজিবাজার।

সপ্তাহের প্রথম দিনে রোববার দুই বাজারেই সূচকের উল্লম্ফন হয়েছে। বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।

প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৬২পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৮৮৭ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। এই সূচক গত ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

এর আগে এর চেয়ে বেশি সূচক ছিল ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। সেদিন সূচক ছিল ৫ হাজার ৯০৬ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট।

চাঙ্গা বাজারে ব্যাংকগুলোর দর ছিল আরও চাঙ্গা। রোববার ঢাকার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০ টি ব্যাংকের মধ্যে ২৯টিরই দাম বেড়েছে। একটির অপরিবর্তিত ছিল।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের সংগঠন ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“বিভিন্ন কারনে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম কম ছিল। জাতীয় নির্বাচনের কারণে দেশে কি অবস্থা হয়- সে সব চিন্তা করে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ার কেনেনি “

“এখন দেশে স্থিতিশীল পরিবেশে বাজারে আস্থা ফিরে এসেছে। সূচকের পাশাপাশি লেনদেন বাড়ছে। ২০১৮ সালে ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করেছে। সবার প্রত্যাশা ভালো মুনাফা দেবে। সবকিছু মিলিয়ে এখন সবাই ব্যাংকের শেয়ারের দিকে ঝুঁকেছে।”

‘তবে একটি খাতের  সব শেয়ারের দাম বাড়া পুঁজিবাজারের জন্য খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়’ মন্তব্য করে  পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি খাতে বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি থাকে, কিছু কোম্পানি ভাল কিছু খারাপ, তেমনি ভাবে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের মধ্যেও ভালো-মন্দ আছে। ঢালাও ভাবে সবগুলোর দাম বাড়া যুক্তিযুক্ত নয়।”

“পুঁজিবাজারে দেখা যাচ্ছে ভাল গুলোর চেয়ে খারাপ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেশি বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে আবার কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।”

 সতর্ক থেকে দেখে-শুনে শেয়ার কেনার পরামর্শ দেন মনিরুজ্জামান।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওসমান ইমাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "পুঁজিবাজারে খেলা (কারসাজি) শুরু হয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীদের বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। এখন যে শেয়ার গুলোর দাম বাড়ছে তার বেশির ভাগই তিন মাস পরে টিকবেনা।”

“ব্যাংক খাতে যে শেয়ারের দাম বাড়ছে তার কিছুটা ন্যাচারাল। তবে অনেকটা বানানো; কারন সব শেয়ারে তো আর খেলা (কারসাজি) হয় না। ব্যাংক খাতের শেয়ারের দাম যদি বাড়ানো যায় অনেকে লোভে পরে খেলায় পা দেবে।"

“না বুঝে শেয়ারে বিনিয়োগ করলে লোকসানের ঝঁকি বাড়বে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”

রোববার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের। এদিন ব্যাংকটির শেয়ার দর ১৩ টাকা ৫০ পয়সা বেড়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ টাকা ৮০ পয়সা বেড়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ১ টাকা ৪০ পয়সা করে শেয়ার দর বেড়েছে ইস্টার্ন ও পূবালী ব্যাংকের।

উত্তরা ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বেড়েছে ১ টাকা করে। শাহজালাল ব্যাংকের  ৯০ পয়সা, ইসলামী ও সিটি ব্যাংকের ৮০ পয়সা করে, ফার্স্ট সিকিউরিটি, যমুনা, প্রিমিয়ার এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৭০ পয়সা করে বেড়েছে।

স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক-এসআইবিএল ও প্রাইম ব্যাংকের বেড়েছে ৬০ পয়সা। রূপালী, ট্রাস্ট ও আইএফআইসি ব্যাংকের ৫০ পয়সা করে।

ন্যাশনাল ও ব্যাংক এশিয়ার বেড়েছে ৪০ পয়সা করে। সাউথইস্ট, এনসিসি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ঢাকা এবং আল আরফাহ ইসলামী ব্যাংকের ৩০ পয়সা করে বেড়েছে।

এক্সিম, ওয়ান ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ২০ পয়সা করে এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ার দর ১০ পয়সা বেড়েছে।

রোববার কোনো ব্যাংকের শেয়ার দর কমেনি। তবে লেনদেন শেষে এবি ব্যাংকের শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে।