ফের সরগরম পুঁজিবাজার

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব অব্যাহত রয়েছে। মূল্যসূচকের পাশপাশি বাড়ছে লেনদেন।

ফারহান ফেরদৌসআবদুর রহিম হারমাছি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2019, 10:54 AM
Updated : 3 Jan 2019, 11:00 AM

২০১০ সালের ধসের পর যে বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তারা আবার ফিরছেন।

ভোটের পর তিন দিনে প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২০০ পয়েন্টের বেশি। লেনদেনও বাড়তে বাড়তে হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর বাজারে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হয়েছেন। সে কারণেই চাঙ্গাভাব দেখা যাচ্ছে বাজারে।

এ পরিস্থিতিতে যতো দ্রুত সম্ভব ভালো ভালো শেয়ার বাজারে আনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৪ দশমিক ০৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫৫৯০ দশমিক ৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।।

এই সূচক চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এর চেয়ে বেশি সূচক ছিল ২০১৮ সালের ৩০ অগাস্ট। সেদিন সূচক ছিল ৫ হাজার ৬০০ পয়েন্ট। 

জাতীয় নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকেই বাজারে অল্প অল্প সূচক বাড়তে শুরু করে।

ভোটের পর সূচক বাড়ছে বেশ গতিতে। প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স তিন দিনেই বেড়েছে ২০৫ পয়েন্ট।

ভোটের আগে ১৭ ডিসেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে সূচক বাড়তে শুরু করে। ঐ দিন ডিএসইতে ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ২১৮ পয়েন্ট।

এরপর টানা ১০ কার্য দিবসে ডিএসইএক্স ৩৭২ পয়েন্ট বেড়ে বৃহস্পতিবার ৫ হাজার ৫৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এই নিয়ে টানা ১০ দিন সূচক বাড়ল পুঁজিবাজারে।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৩০ দশমিক ১৫ পয়েন্ট।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভোটের পর সবার মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে যে, বাজার ভালো হবে। নতুন সরকার বাজারের দিকে নজর দেবেন। শিল্প স্থাপনের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

“এ সব কারণে ২০১০ সালের ধসের পর যে সব বিনিয়োগকারী বাজার থেকে চলে গিয়েছিল তারা আবার ফিরে আসছে। একইসঙ্গে নতুন বিনিয়োগকারীরাও বাজারে ঢুকছে। তাই শেয়ার ক্রয় বেড়ে গেছে এবং সূচক বাড়ছে।”

এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের গুজবে কান না দিয়ে দেখেশুনে বিনিয়োগ করার জানিয়ে রকিবুর রহমান বলেন, “বাজারে এখন প্রচুর ভালো শেয়ার প্রয়োজন। সরকার বা বিএসইসি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”

অন্যদিকে বাজারে যাতে কোন মহল কোন ধরনের কারসাজি করার সুযোগ না পায় সে ব্যাপারেও সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান।

ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের আতঙ্ক-শঙ্কা ছিল। সবকিছু কাটিয়ে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ফের ক্ষমতায় আসায় বাজারে চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। দেশের আরও উন্নয়ন হবে। পদ্মা সেতুসহ যে সব বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে সেগুলো শেষ হবে।”

“বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। এ আস্থা উন্নয়নের প্রতি; শেখ হাসিনার প্রতি। আর এ আস্থার কারণেই ভোটের পর প্রথম লেনদেনেই তেজিভাব দেখা দেয় বাজারে। বুধবারও তা অব্যাহত ছিল।”

‘আগামী দিনগুলোতে বাজার আরও ভালো হবে’ জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেক শেয়ারের দর একেবারে তলানীতে…। সেগুলোর দাম বাড়তে শুরু করলে বাজার গতি পাবে।”

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৯২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে ২২৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বেশি।

এই লেনদেন প্রায় সাড়ে তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ।

বুধবার এই বাজারে ৬৯৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

অন্যদিকে সিএসইতে ৭০ কোটি ২১  লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের তুলনায় ৩৯ কোটি টাকা ৯২ লাখ  টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন ছিল ৩০ কোটি ২৯ লাখ।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৪৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩০৩টির, কমেছে ৩৩টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টি কোম্পানির শেয়ার দর।

ডিএসইএক্স বা প্রধান সূচক ৯৪ দশমিক ০৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৯০ দশমিক ০৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ২১ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে এক হাজার ২৭১ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ২৯ দশমিক ০১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে এক হাজার ৯৪১ পয়েন্টে।

সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৩০ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৭ হাজার ১৯৪ দশমিক ১৪ পয়েন্টে।

লেনদেন হয়েছে ২৭৫ টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৩৭ টির, কমেছে ২৬ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২ টির দর।