শুধু সপ্তাহের শেষ দিন নয়, চলতি মে মাসজুড়েই দরপতন হয়েছে বাজারে। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে। কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।
নানা তৎপরতায়ও দরপতন থামছে না পুঁজিবাজারে। টানা সূচক পতন দেখে হতাশ বিনিয়োগকারীরা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে এক ধরনের অস্থরিতা চলছে। এই সময়ে পুঁজিবাজার ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা না হয়ে উল্টো ধারাবাহিক পতন হচ্ছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি ‘গোষ্ঠী’ নানা গুজব ছড়িয়ে বাজারে পতন ঘটাচ্ছে। কম দামে শেয়ার কিনতেই তারা এটি করছে।”
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে বাংলাদেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩৫৫ পয়েন্ট। শতকরা হিসাবে এই পতন প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ।
১ মে এই সূচক ছিল ৫ হাজার ৬৯৮ পয়েন্ট । ৩১ মে সেই সূচক ৫ হাজার ৩৪৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
পুরো মাসে ৩ দিন সূচক সামান্য বাড়লেও বাকি সব দিনেই কমেছে। তার আগে এপ্রিল মাসের শেষের দিকেও বাজারে দরপতন হয়।
বিনিয়োগকারী মীর রায়হান সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাল শেয়ারগুলোর দাম কমে যাচ্ছে-এটা স্বাভাবিক না । আমি দেখেশুনে ভাল শেয়ার কিনেছি, যেন লাভ কম হলেও লোকসান না হয়। এখন সে সব ভাল শেয়ার প্রায় ৩০ শতাংশ লোকসানে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অর্থনীতিতে তারল্য সংকট আছে... সামনে বাজেট। সব মিলিয়ে এখন বাজার একটু খারাপ।”
তবে ঈদের পরে বাজার ভাল হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ঠেকাতে ২৪ মে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উদ্যোগে বাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে বাজার নিয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় শীর্ষ ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো।
ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) প্রধান কার্যালয়ে এই জরুরি সভা হয়।
সভায় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে উপস্থিত প্রতিনিধিদের কাছে মতামত জানতে চান। তিনি এসময় বলেন, “আমরা যদি ইতিবাচক চিন্তা করি তবে এই সাময়িক অবস্থা কেটে যাবে। যার যার পক্ষ থেকে বাজারকে সাপোর্ট দিতে হবে।”
মঙ্গলবার ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) একটি প্রতিনিধি দল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঙ্গে দেখা করে বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
“আমার মনে হয় একটি গোষ্ঠী নানা গুজব ছড়িয়ে বাজারে পতন ঘটাচ্ছে। কম দামে শেয়ার কিনতেই তারা এটি করছে। পরে দাম বাড়লে বিক্রি করে দিয়ে ভালো মুনাফা করতেই তারা এই কৌশল নিয়েছে।”
বাজারের সর্বশেষ অবস্থা
মে মাসের এবং সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫১ পয়েন্ট কমে প্রায় ৫ হাজার ৩৪৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।লেনদেন হয়েছে ৩৬১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৯৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা কম।
লেনদেনে অংশ নেয় ৩৩৬টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮০টির, কমেছে ২১২টির ও অপরিবর্তিত রয়েছ ৪৪টির দর।
ডিএসইএস বা ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট কমে প্রায় একহাজার ২৩৮ পয়েন্টে রয়েছে; এবং ডিএস৩০ সূচক ২৬ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট কমে প্রায় ১ হাজার ৯৭৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা কমে ২০ কোটি ৩ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
লেনদেনে থাকা ২০৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫০টির, কমেছে ১৪১টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টির দর।
দিন শেষে সিএসই সার্বিক সূচক সিএএসপিআই প্রায় ১৯৬ পয়েন্ট কমে ১৬ হাজার ৪৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।