পুঁজিবাজারে সূচক এক বছরে সবচেয়ে কম

দরপতন থামছে না পুঁজিবাজারে; টানা ১৩ দিন ধরে সূচক পতন দেখে হতাশ বিনিয়োগকারীরা।

ফারহান ফেরদৌস নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2018, 11:53 AM
Updated : 20 May 2018, 12:01 PM

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৮১৩ পয়েন্ট। ১৩ দিনে সূচক ৪২৩ পয়েন্ট বা ৭.৩০ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৫ হাজার ৩৯০ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

গত এক বছরের মধ্যে সূচক এখনই সবচেয়ে কম। এর আগে সূচক সবচেয়ে কম ছিল ২০১৭ সালের ৩০ মে, ৫ হাজার ৩৭৩ পয়েন্ট।

রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৫২ পয়েন্টের বেশি। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। একইসঙ্গে কমছে লেনদেন। একই চিত্র চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক আমানতে সুদের হার এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকগুলোতে সুদের হার অনেক বেড়ে গেছে। মানুষ পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে বেশি লাভের জন্য ব্যাংকে রাখছে।”

গত এক মাসে সূচক পতনের চিত্র

ব্যাংক আমানতে সুদের হার এক সময় ৫-৬ শতাংশে নেমে এলেও এখন কোনো কোনো ব্যাংক ১০ শতাংশের মতোও দিচ্ছে।

এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথম প্রান্তিকে খুব খারাপ ফলাফল দেখিয়েছে বলে তার নেতিবাচক প্রভাব ব্যাংক খাতের শেয়ারের উপর পড়েছে, সেটাও সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করেন লালী।

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হাসান বলছেন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা।  

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডলারের দাম বাড়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। এপ্রিল মাসের শেষে দেখা গেছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে পরিমাণ শেয়ার কিনেছে, তার চেয়ে বিক্রি করেছে বেশি।

এই প্রবণতার কারণ ব্যাখ্যা করে এমরান বলেন, “ডলারের দাম যখন বাড়ে, তখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লোকসানের মধ্যে পড়েন।

“ধরুন, কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারী এখন যদি ৮৫ টাকায় একটি শেয়ার কেনে এবং এক মাস পরে যদি শেয়ারটির দাম ৮৫ টাকা থাকে, তাহলে টাকায় কোনো লোকসান না হলেও যদি ডলারের দাম বেড়ে ৯০ টাকা হয়ে যায়, তখন কিন্তু সে শেয়ার বিক্রি করে এক ডলারও পাবে না।”

ডলারের দাম আরও বাড়ার  আশঙ্কা করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

দরপতনের আরও দুটি কারণও দেখান শান্তা অ্যাসেটের সিইও এমরান। একটি হচ্ছে ঈদ এবং অন্যটি হচ্ছে বাজেট।

এমরান বলেন, “সামনে বাজেট ও ইলেকশন, এসময় বিনিয়োগকারীরা অবজারভেশন করে। আর রোজার সময় কিন্তু বাজার কিছুটা মন্দা যায়, কারণ মানুষ ঈদের খরচের জন্য শেয়ার ছেড়ে টাকা তুলে নেয়।”

ঈদের সময় বাজার মন্থর হওয়ার প্রবণতা থাকলেও এবার তার চেয়েও বেশি বলে মনে করেন ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারী তানভির আহমেদ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোজার সময় বাজার কিছুটা কমে, কিন্তু এরকম পতন আশা করি নাই । আমি অনেক টাকা লোকসানে আছি।”

“এই মুহুর্তে শেয়ার বিক্রি করতে পারছি না। যদি বিক্রি করি, তবে প্রায় ২০ শতাংশ টাকা মূলধন থেকে কমে যাবে,” বলেন তানভির, তার মতো উদ্বেগে আছেন আরও অনেকে।

দিনের লেনদেন

সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার লেনদেন শুরুর পর সূচক বাড়তে থাকলেও শেষ কমেই লেনদেন ‍শেষ হয়।

ডিএসইর প্রধান সূচক বা ডিএসইএক্স ৫২ পয়েন্ট কমে প্রায় ৫ হাজার ৩৯০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ডিএসইতে লেনদেন হয় ৩৯৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে ৯৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা কম।

ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ৩৩৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫০টির, কমেছে ২৬১টির ও অপরিবর্তিত রয়েছ ২৩টির।

ডিএসইএস বা ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২ দশমিক ২১ পয়েন্ট কমে প্রায় এক হাজার ২৬৫ পয়েন্টে রয়েছে; ডিএস৩০ সূচক ১৬ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমে প্রায় ২ হাজার ৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

রোববার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন ৩৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা কমেছে; এই বাজারে ১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়।

লেনদেনে থাকা ২১৭টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৮টির, কমেছে ১৫৫টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টির।

দিন শেষে সিএসই সার্বিক সূচক সিএএসপিআই প্রায় ১৬৮ পয়েন্ট কমে ১৬ হাজার ৬৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।