‘খেলাপি ঋণ খেয়ে ফেলছে’ ব্যাংকের মুনাফা

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশির ভাগেরই মুনাফা কমেছে।

ফারহান ফেরদৌস নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2018, 12:19 PM
Updated : 15 May 2018, 02:37 PM

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতি এড়াতে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশনিংয়ের জন্য মুনাফা থেকে বাড়তি অর্থ সরাতে হওয়া মুনাফা কমে গেছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্য মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে ২৬টি ব্যাংক তাদের ২০১৮ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রন্তিকের শেয়ারপ্রতি মুনাফার তথ্য প্রকাশ করেছে।

এতে দেখা যায়, ১৪টি ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় কমেছে। ১২টি ব্যাংকের মুনাফা আগের বারের চেয়ে বেড়েছে।

মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, “ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ক্ষতি এড়াতে ব্যাংকগুলোকে বেশি বেশি টাকা তাদের মুনাফা থেকে সরিয়ে রাখতে হচ্ছে, তাই মুনাফা কমে গেছে।”

এছাড়া প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার প্রভাব ব্যাংকিং খাতে পড়েছে বলে মনে করেন এই ব্যাংকার।

“আর ব্যাংকগুলোর টাকায় কমতি থাকায় বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করতে হচ্ছে বলেও মুনাফা কমে গেছে।”

মুনাফা কমেছে ১৪টি ব্যাংকের

ওয়ান ব্যাংক প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৩৩ পয়সা, যা আগের বারের তুলনায় ৯০ পয়সা বা ৭৩ শতাংশ কম।

এই সময়ে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৮ পয়সা, যা আগেরবারের চেয়ে ১১ পয়সা বা ৫৮ শতাংশ কম ।

প্রাইম ব্যাংক এই তিন মাসে ৩৪ পয়সা শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে, যা আগেরবারের চেয়ে ৪৪ পয়সা বা ৫৬ শতাংশ কম।

আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নিমজ্জিত এবি ব্যাংক প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ১৬ পয়সা, যা আগের বারের তুলনায় ১৫ পয়সা বা ৪৮ শতাংশ কম।

এই সময়ে উত্তরা ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা আগের চেয়ে ৩৩ পয়সা বা ৪৬ শতাংশ কমে ৩৯ পয়সায় নেমেছে।

ইস্টার্ন ব্যাংক তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৬৯ পয়সা, যা আগের চেয়ে ৫৮ পয়সা বা ৪৬ শতাংশ কম।

এই প্রান্তিকে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা আগের চেয়ে ২৯ পয়সা বা ৪৫ শতাংশ কমে ৩৬ পয়সায় নেমেছে।

আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৪১ পয়সা, যা আগের চেয়ে ৩০ পয়সা বা ৪২ শতাংশ কম।

এই সময়ে সাউথইস্ট ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা ২৯ শতাংশ কমে যথাক্রমে ৬৮ পয়সা ও ২৭ পয়সায় নেমেছে।

ট্রাস্ট ব্যাংক শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৮৩ পয়সা, যা আগের চেয়ে ২২ পয়সা বা ২১ শতাংশ কম।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা আগের চেয়ে ১৮ শতাংশ কমে যথাক্রমে ৪০ পয়সা ও ৮৫ পয়সায় নেমেছে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৪৪ পয়সা, যা আগের চেয়ে ৪ পয়সা বা ৮ শতাংশ কম।

যে সব ব্যাংক নিয়মিত প্রভিশনিং (খেলাপি ঋণের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে মুনাফার একটি অংশ সংরক্ষণ করা) করেনি তাদের উপর এবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চাপ দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যেসব ব্যাংক আগে থেকে নিয়মমতো প্রভিশনিং করে করে আসছিল, তারা মুনাফা বেশি মুনাফা দেখাতে পেরেছে।”

১১ ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৩৬ পয়সা, যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ২৬ পয়সা বা ২৬০ শতাংশ বেশি।

এই সময়ে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা আগের চেয়ে ২১ পয়সা বা ২১০ শতাংশ বেড়ে ৩১ পয়সায় উঠেছে।

ব্যাংক এশিয়া প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৬০ পয়সা, যা আগের চেয়ে ২৫ পয়সা বা ৭১ শতাংশ বেশি।

যমুনা ব্যাংক এই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৫২ পয়সা, যা আগের চেয়ে ১৩ পয়সা বা ৩৩ শতাংশ বেশি।

তিন মাসে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা আগের চেয়ে ১৬ পয়সা বা ২৮ শতাংশ বেড়ে ৭৩ পয়সায় উঠেছে।

আইএফআইসি ব্যাংক এই সময়ে মুনাফা করেছে ৩০ পয়সা, যা আগের চেয়ে ৪ পয়সা বা ১৫ শতাংশ বেশি।

ব্র্যাক ব্যাংক এই প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে একটাকা ১৮ পয়সা, যা আগের চেয়ে ১১ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেশি।

ঢাকা ব্যাংক প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৫৫ পয়সা যা, আগের বারের তুলনায় ৫ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেশি।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক এই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৩ টাকা ১৯ পয়সা, যা আগের চেয়ে ২৮ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেশি।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা আগের চেয়ে ৩ পয়সা বা ৭ শতাংশ বেড়ে ৪৫ পয়সায় উঠেছে।

ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক এই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৩৯ পয়সা, যা আগের চেয়ে ১ পয়সা বা ৩ শতাংশ বেশি।

লোকসান কমেছে একটির

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে ৩৪ পয়সা, যা আগের বারের তুলনায় ১৯ পয়সা বা ৩৬ শতাংশ কম।