শেনচেন, সাংহাই স্টক এখন ডিএসইর অংশীদার

চুক্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত অংশীদার করে নিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2018, 02:45 PM
Updated : 14 May 2018, 02:45 PM

গত ৩ মে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পর চীনা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তির আনুষ্ঠানিকতাই বাকি ছিল।

সোমবার বিকালে হোটেল লো মেরিডিয়ানে স্বাক্ষরিত চুক্তির মধ্য দিয়ে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা পেল শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম।

ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএম মাজেদুর রহমান, শেনচেন স্টক এক্সচঞ্জের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী ওয়াং জিনজুন এবং সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারভাইজারি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্যান শুয়েশিয়ান চুক্তিতে সই করেন।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ডিএসইর পরিচালনা র্পষদসহ শেয়ারহোল্ডর, শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধিরাও ছিলেন অনুষ্ঠানে।

চুক্তি সইয়ের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, “আজ বাংলাদশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।”

কৌশলগত অংশীদার পাওয়ার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ অর্থনীতিতে আগের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

গত ৩ মে চীনের চীনা এই কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত অংশীদার করতে ডিএসইর প্রস্তাবে চূড়ান্ত সায় দেয় বিএসইসি।

চীনা এই কনসোর্টিয়াম ডিএসইর ‘ব্লকড অ্যাকাউন্টে’ থাকা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ২৫ শতাংশ বা ৪৫,০৯,৪৪,১২৫টি শেয়ার ২১ টাকা দরে কিনবে; যার আর্থিক মূল্য নয়শ কোটি টাকার বেশি।

পাশাপাশি তারা ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) খরচ করবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে।

২০১৩ সালের ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ১৮০ কোটি শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশ কৌশলগত অংশীদারদের কাছে বিক্রি করা যাবে। ৩৫ শতাংশ বিক্রি করতে হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। বাকী ৪০ শতাংশ থাকবে ট্রেক হোল্ডার বা মালিকদের কাছে।

উন্নত প্রযুক্তি সুবিধা, ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসা উন্নয়নে পরামর্শক সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে কৌশলগত অংশীদার নিতে চায় ডিএসই।

চীনের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে পাওয়ায় ডিএসইর জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ ও লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ডিএসইতে নতুন পণ্যও আসবে বলে তারা আশা করছেন।

চীনের প্রধান তিনটি স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে সাংহাই ও শেনচেন রয়েছে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে। বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের সেরা ১০টি স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকায়ও রয়েছে এই দুই পুঁজিবাজার।

সাংহাই স্টক একচেঞ্জের বাজার মূলধন সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন ডলার আর শেনচেন স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন দুই দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলার।

অপরদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ৫১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

কৌশলগত অংশীদার পেতে গত বছরের শেষ দিকে ডিএসইর আহ্বানে দুটি কনসোর্টিয়াম দরপত্র জমা দেয়। এদের মধ্যে ছিল চীনের শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম এবং ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্ট্রিয়ার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক-এর কনসোর্টিয়াম।

দুটি কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে ১০ ফেব্রুয়ারি চীনের কনসোর্টিয়ামকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। এরপর চীনের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পেতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আবেদন করে ডিএসই। কিন্তু ১৯ মার্চ প্রস্তাব অনুমোদন না দিয়ে কিছু শর্তসাপেক্ষে তা সংশোধন করতে বলে বিএসইসি।

এরপর ৩০ এপ্রিল কোম্পানির সাধারণ সভায় সংশোধিত প্রস্তাবে সায় দেয় ডিএসইর শেয়ার হোল্ডাররা। ডিএসইর এ সিদ্ধান্তের পর ৩ মে অনুমোদন দেয় বিএসইসি।

চুক্তির অনুষ্ঠানে ডিএসইর চেয়ারম্যান আবুল হাশেম বলেন, “২০১৫ সালে কৌশলগত বিনিয়োগকারী খুঁজতে শুরু করি আমরা। এক্ষেত্রে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সঙ্গে র্দীঘমেয়াদে সম্পর্কের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”

তিনি জানান, ৩৯টি আন্তর্জাতিক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের পর দরপত্রের মাধ্যমে শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামকে বাছাই করা হয়েছে।