চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ডিএসইর পর্ষদ সদস্যরাও ছিলেন বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী জানিয়েছেন।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “গতকাল (বুধবার) সকালে চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধি দল বিএসইসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিল।
“এটি কোনো পূর্বনির্ধারিত বৈঠক ছিল না। চীনা প্রতিনিধিরা কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।”
ডিএসই কৌশলগত অংশীদার হিসেবে শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ সমন্বয়ে গঠিত চীনা কনসোর্টিয়ামকে নির্বাচন করেছে। তবে বিএসইসি এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়নি।
ডিএসইর প্রস্তাবে চীনা কনসোর্টিয়ামের শর্তগুলো পর্যালোচনা শেষে বিএসইসির এক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এটা অনুমোদনযোগ্য নয়।
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থি শর্তাবলি প্রত্যাহার করা হয়েছে ডিএসই জানানোর পর তাদের সংশোধিত প্রস্তাব জমা দিতে বলেছে বিএসইসি।
সংশোধিত প্রস্তাব দাখিলে বিএসইসির শর্তের নানা দিক নিয়ে আলোচনার জন্য চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধি দল এখন ঢাকায় অবস্থান করছে।
প্রতিনিধি দলে শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জের দুই পরিচালক রয়েছেন। তারা ডিএসইর সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেন।
শাকিল রিজভী বলেন, “বিএসইসির শর্ত অনুযায়ী সংশোধিত প্রস্তাব জমা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। আমাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।”
দরপত্র প্রক্রিয়ায় কৌশলগত অংশীদারের জন্য সংরক্ষিত ডিএসইর এক-চতুর্থাংশ শেয়ার কিনতে বিদেশি দুটি কনসোর্টিয়াম প্রস্তাব জমা দিয়েছিল।
চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতি শেয়ারের জন্য ২২ টাকা হারে ৯৯২ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব করে। এর বাইরে তারা ডিএসইকে বিনামূল্যে বিভিন্ন কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, যার মূল্য উল্লেখ করা হয় ৩০৮ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ভারতীয় ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের একটি সাবসিডিয়ারির নেতৃত্বাধীন আরেকটি কনসোর্টিয়াম একই শেয়ারের জন্য ১৫ টাকা হারে ৬৭৬ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব করে।
কম মূল্যের পাশাপাশি তাদের প্রস্তাবের অন্য বেশ কিছু দিক পর্যালোচনা করে শেষ পর্যন্ত চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবটিই গ্রহণ করে ডিএসইর পর্ষদ।
এরপর তা অনুমোদনের জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইসির কাছে পাঠায় ডিএসই।
ওই প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য বিএসইসি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে আহ্বায়ক ও মাহবুবুল আলমকে সদস্য সচিব করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে।
কমিটি প্রাথমিক পর্যালোচনার পর দর প্রস্তাব, শেয়ার ক্রয় চুক্তিসহ আরো বেশকিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিল ডিএসইর কাছে।
ব্যাখ্যা পাওয়ার পর সেগুলো যাচাই-বাছাই, বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে ১৫ মার্চ কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চীনা কনসোর্টিয়ামকে বাছাই সংক্রান্ত প্রস্তাব ত্রুটিপূর্ণ, প্রস্তাবের কিছু ধারা ডিএসইর সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ ও দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত জরুরি কমিশন সভায় শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের বিনিয়োগ প্রস্তাব ও শেয়ার ক্রয় চুক্তি অনুমোদন না করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
এরপর কিছু শর্ত চীনা কনসোর্টিয়াম প্রত্যাহার করতে রাজি হওয়ার পর পাঁচটি শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে আরেকবার সংশোধিত প্রস্তাব জমা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় ডিএসইকে।