টানাপড়েনের খবরে দরপতনে সপ্তাহ পার

কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে টানাপড়েনের খবরে দরপতনের মধ্য দিয়েছে সপ্তাহ শেষ করেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2018, 12:24 PM
Updated : 24 Feb 2018, 12:26 PM

গত সপ্তাহের চার কাযদিবসের মধ্যে সব দিনই সূচক কমেছে ডিএসইতে। এসময় কমেছে লেনদেনও।

মাসখানেক ধরেই মুদ্রানীতি, ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানো, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে বাজারে অস্থিরতা চলছিল।

এরপর সম্প্রতি যোগ হয় ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার নেওয়ার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে টানাপড়েন।

চীনের শেনচেন ও সাংহাই স্টক স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ডিএসইর অংশীদার হতে যাচ্ছে এমন খবরের মধ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি এসইএক্স বেড়ে যায় ১২৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ২১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এরপর চীনা কনসোর্টিয়ামের এই দরপ্রস্তাব নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির আপত্তিসহ এই প্রস্তাবের বিষয়ে খবর গণমাধ্যমে আসতে থাকার মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বড় দরপতন শুরু হয় ডিএসইতে।

এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত অংশীদার করার অনুমতি চেয়ে বিএসইসিতে আবেদন করেছে ডিএসই।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুদ্রানীতি, এডিআরসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাজারে মন্দাভাব ছিল। এরপর কৌশলগত বিনিয়োগকারী নেওয়ার প্রক্রিয়াতে যেসব খবর এসেছে তাতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

“বিএসইসিতে প্রস্তাব গেছে। কৌশলগত বিনিয়োগকারী নেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন হলে বাজার ভালো হয়ে যাবে বলে আশা করি।”

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৪৩ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ৪০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫৯০৭ পয়েন্টে।

বাজারের নিম্নমূখীনতায় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যহারে। গত সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৪৯৮ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড; যা আগের সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ৪২ শতাংশ কম।

গত সপ্তাহের চারদিন লেনদেন হয়েছে; আগের সপ্তাহে ছিল পাঁচদিন। দৈনিক লেনদেন ২৭ শতাংশের বেশি কমে ৩৭৪ কোটি টাকা করে হয়ে।

সপ্তাহের শেষদিন বৃহস্পতিবার বাজারে লেনদেন হয়েছে ২৮৯ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড; যা দেড় বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন।

লেনদেন কমে যাওয়া সম্পর্কে বাজার সংশ্লিষ্ঠ একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “লেনদেন কমে আসার মানে হল, বাজারে বিক্রির চাপ কমে গেছে। বিক্রির চাপ যখনই কমে যায় তখনই কেনার চাপ বেড়ে যায়। তার মানে নিম্নমূখীনতা থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে।”

বৃহস্পতিবারের আগে বাজারে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছিল ২০১৬ সালে ১১ জুলাই। সেদিন ডিএসইএক্স ৪৫০৫ পয়েন্টে লেনদেন হয়েছিল ২৭২ কোটি টাকার। এরপর থেকেই সূচক ও লেনদেন বাড়তে শুরু করে।

গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৩৩৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৫টির, কমেছে ২৭৭টির, ৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে এবং লেনদেন হয়নি একটি।

গত সপ্তাহে দাম বৃদ্ধির তালিকায় থাকা অধিকাংশই ছোট মূলধনী ও দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ার।

এ তালিকায় রয়েছে- অ্যাপেক্স স্পিনিং, সিভিও পেট্রো কেমিক্যাল, রেইনউইক, অ্যাম্বিফার্মা ও অ্যাপেক্স ফুডস। দর হারানোর তালিকায় রয়েছে- বঙ্গজ, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, আরএকে সিরামিকস ও মেঘনা কনডেন্ডন্স মিল্ক।   

বাজারে লেনদেনে শীর্ষে ছিল- ইউনিক হোটেল, গ্রামীণফোন, স্কয়ারফার্মা, সিভিও পেট্রো কেমিক্যাল ও ফুওয়াং ফুড।

গত সপ্তাহে বস্ত্র খাতে লেনদেন হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বাজারের মোট লেনদেনে ১৪ শতাংশ হয়েছে এ খাতে। এরপরই ঔষধ ও রসায়ন, প্রকৌশল ও ব্যাংক খাতে হয়েছে বাজারের ১৩ শতাংশ করে লেনদেন।