উত্থান-পতনে অস্থিরতা পুঁজিবাজারে

কয়েক বছর ধরে স্থিতিশীলতার পর আবারও বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।

রিয়াজুল বাশার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2018, 01:27 PM
Updated : 19 Feb 2018, 05:47 AM

গত একমাসের মধ্যে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকে ওঠানামা করছে বড় ব্যবধানে; কোনোদিন সূচক উত্থানের রেকর্ড হচ্ছে, আবার কোনো দিন হচ্ছে পতনের রেকর্ড।

গত কিছুদিন ধরে মুদ্রানীতি, ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানো, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়ের কারণ দেখানো হলেও এই অস্থিরতার পেছনে নতুন করে ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার নেওয়ার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে টানাপড়েনের খবরকে দায়ী করা হচ্ছে।

৪ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২১ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৮৮৮ পয়েন্টে নেমে আসে। এর আগে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল ডিএসইএক্সের সর্বোচ্চ পতন হয়। সেদিন এই সূচক ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৯৪ পয়েন্টে নামে।

চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম ডিএসইর অংশীদার হতে যাচ্ছে এমন খবরের মধ্যে গত রোববার ডিএসইএক্স বেড়ে যায় ১২৮ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ২১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চীনা কনসোর্টিয়ামের এই দরপ্রস্তাব নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির আপত্তিসহ এই প্রস্তাবের বিষয়ে খবর গণমাধ্যমে আসতে থাকার মধ্যে বৃহস্পতিবার বড় দরপতন হয় পুঁজিবাজারে। ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে দশমিক ৮৩ শতাংশ নেমে যায়। রোববার হয়েছে আরও বড় পতন। এদিন ডিএসইএক্স কমেছে এক দশমিক ৬৪ শতাংশ।

বর্তমান অস্থিরতা নিয়ে ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটি ভাল প্রস্তাবকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবেন, তাহলে কি হবে?”

তবে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার নামোল্লেখ না করলেও রকিবুর রহমান ‘ভাল প্রস্তাব’ বলতে ডিএসই অংশীদার হতে চীনের দৃটি স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবকে বুঝিয়েছেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে, কৌশলগত অংশীদার করতে দুটি কনসোর্টিয়ামের দর প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে চীনের শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের দেওয়া প্রস্তাব ডিএসই গ্রহণ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা পুনরায় যাচাই-বাছাই করতে নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি।

এ খবর আসার পর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এসইসির এ পদক্ষেপের বিষয়ে ‘ডিএসইর কৌশলগত মালিকানার অংশীদার বাছাইয়ে অবৈধ হস্তক্ষেপে টিআইবির উদ্বেগ: জড়িতদের জবাবদিহি ও সংশ্লিষ্ট দরদাতাকে কালো তালিকাভুক্তির আহ্বান’শীর্ষক এক বিৃবতি দেয়।

টিআইবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, “দর প্রস্তাব মূল্যায়নে প্রায় অর্ধেক পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের তদবির ও চাপ প্রয়োগ যেমন নজিরবিহীন ও আইনবিরুদ্ধ, বিএসইসি কর্তৃক তাতে প্রভাবিত হয়ে বাছাই প্রক্রিয়াকে কলুষিত করে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ইন্ধন যোগানো তেমনই বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য।”

এ প্রসঙ্গে বিএসইসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই না করে এ ধরনের চূড়ান্ত মন্তব্য টিআইবির গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

কৌশলগত অংশীদার পেতে তিন মাস আগে ডিএসই আহ্বানের বিপরীতে যেসব দরপত্র জমা পড়েছিল তারমধ্য থেকে শনিবার চীনের এই কনসোর্টিয়ামকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই।

পাশাপাশি ভারত, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি কনসোর্টিয়ামের দেয়া প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়; যাতে রয়েছে- ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্ট্রিয়ার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক।

চীনা কনসোর্টিয়াম ৯৯০ কোটি টাকায় ডিএসইর ৪৫ কোটি বা ২৫ শতাংশ শেয়ার (প্রতিটি ২২ টাকা দরে) কিনে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। সেসঙ্গে ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) খরচ করবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে তারা।

রকিবুর রহমান বলেন, “সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে, কৌশলগত অংশীদার এলে তারাই বাজার ভাল করে ফেলবে।”

ডিএসই সভাপতির মতোই একই সূরে কথা বলেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফাইন্যান্সের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা।

তিনি বলেন, সাম্প্রতি উত্থান-পতনের পেছনে ডিএসইতে কৌশলগত অংশীদার নেওয়া নিয়ে ডিএসই ও বিএসইসির মধ্যে টানাপড়েনের খবরের প্রভাব রয়েছে।  

তবে এসবের কোনো কারণকেই বাজারের এই অস্থিরতার কারণ বলে হিসেবে দেখতে নারাজ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাজারে আশংকিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি। যে কারণগুলি দেখানো হচ্ছে তা খুব একটা যৌক্তিক না।

“কৌশলগত অংশীদার ছাড়াও তো আমাদের পুঁজিবাজার স্থিতিশীলভাবে চলছিল। কৌশলগত অংশীদার কে এলো না এলো তার সঙ্গে বাজারের প্রত্যক্ষ কোনো যোগাযোগ নেই।”

এসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, “আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। বাজার ভাল হওয়ার বিষয়ে আমি আশাবাদী।”