চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবে ডিএসইর সায়

চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামকেই অংশীদার হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2018, 01:07 PM
Updated : 10 Feb 2018, 01:51 PM

শনিবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন এক পরিচালক।

তিনি বলেন, “আর্থিক ও কারিগরি দিক বিবেচনা করে শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবকেই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। আমরা সর্বসম্মতিক্রমে তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছি।”

নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনের পর শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে ডিএসইর চূড়ান্ত চুক্তি হবে বলে জানান তিনি।

কৌশলগত অংশীদার পেতে তিন মাস আগে ডিএসই আহ্বানের বিপরীতে যেসব দরপত্র জমা পড়েছিল, মঙ্গলবার ডিএসইর পর্ষদ সভায় ওই সেগুলো খোলা হয়।

চীনের এই কনসোর্টিয়ামের পাশাপাশি ভারত, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি কনসোর্টিয়ামও প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে রয়েছে- ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্ট্রিয়ার ফান্ড বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক।

চীনা কনসোর্টিয়াম ৯৯০ কোটি টাকায় ডিএসইর ৪৫ কোটি বা ২৫ শতাংশ শেয়ার (প্রতিটি ২২ টাকা দরে) কিনে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। সেসঙ্গে ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) খরচ করবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে তারা।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ডিএসইর এক কর্মকর্তা জানান, তিন দেশি কনসোর্টিয়ামটি ডিএসইর ২৫ দশমিক ১ শতাংশ শেয়ার প্রতিটি ১৫ টাকা দরে কিনতে প্রস্তাব দেয়। কারিগরি সহায়তারও প্রস্তাব দেয়, কিন্তু কত টাকার তা স্পষ্ট করেনি।

এদের মধ্যে শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামকেই গ্রহণ করলো ডিএসই।

ওই পরিচালক বলেন, “ শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তাবই আমাদের কাছে যুগোপযোগী মনে হয়েছে। তাদেরকে কৌশলগত অংশীদার করতে পারলে ঢাকার পুঁজিবাজারে চেহারা পাল্টে যাবে বলে আমরা মনে করি।”

ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনে মালিকানায় আসার পর এ কনসোর্টিয়াম তাদের প্রতিনিধিকেও ডিএসইর পর্ষদে বসাবে।

“তখন ডিএসইর চেহারা আমূল পাল্টে যাবে,”বলেন এক পরিচালক।  

চীনের প্রধান তিনটি স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে সাংহাই ও শেনচেন রয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে। বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের সেরা ১০টি স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাতেও রয়েছে তারা।

সাংহাই স্টক একচেঞ্জের বাজার মূলধন সাড়ে তিন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। শেনচেন স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন দুই দশমিক দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অপরদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ৫১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

বড় এ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার হলে দেশি-বিদেশি কোম্পানির তালিকাভুক্তি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আরও আস্থাশীল হয়ে উঠবে বলে বাজার সংশ্লিষ্ঠদের ধারণা।

এছাড়া কৌশলগত অংশীদাররা এলে ঢাকার বাজারে পণ্যের ভিন্নতাও বাড়বে বলে মনে করেন।

২০১৩ সালের ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ১৮০ কোটি শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশ কৌশলগত অংশীদারদের কাছে বিক্রি করা যাবে। ৩৫ শতাংশ বিক্রি করতে হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। বাকী ৪০ শতাংশ থাকবে ট্রেক হোল্ডার বা মালিকদের কাছে।

উন্নত প্রযুক্তি সুবিধা, ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসা উন্নয়নে পরামর্শক সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে কৌশলগত অংশীদার নিতে চায় ডিএসই।

এর আগেও একবার কৌশলগত অংশীদারের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল ডিএসই কর্তৃপক্ষ। তখন দেশি-বিদেশি কয়েকটি কোম্পানি দরপত্র জমা দিলেও ডিএসইর কাছে ওইসব প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তা বাতিল করা হয়।